নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৭ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
আগামী ১২ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে। বিএনপির একাধিকে নেতা মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে যদি আপিল বিভাগ জামিন না দেয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যদি মুক্ত না হন তাহলে বিএনপির একদফা আন্দোলনে যাওয়া উচিত। ক্রমশ বিএনপির মধ্যে এই মত শক্তিশালী হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশই এখন একদফা আন্দোলনের পক্ষপাতি। এই সিনিয়র নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপির এখন হারাবার কিছু নেই কাজেই যদি আন্দোলন না করা হয় তাহলে আরো নি:শোষিত হয়ে যাবে। বরং লড়াই করে যদি বিএনপি নি:শোষিত হয় সেটাই ভালো।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাসের মত হেভিওয়েট নেতারা যারা এতদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে ছিল তারাও এখন একদফা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এই একদফা আন্দোলন করার জন্য জাতীয় সংসদ থেকে নির্বাচিত বিএনপির যে ৬ এমপি আছেন তাদেরকে পদত্যাগের কথা বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তার এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন যে, সংসদে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। এজন্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু বিএনপির এই জনপ্রিয় দাবিকে পাস কাটিয়ে আজ চট্টগ্রাম আসনের জন্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করছে বিএনপি। এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে বিএনপিতে আরেকদফা কোন্দলের খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতারা সংসদ থেকে পদত্যাগ, একদফা আন্দোলন এবং চট্টগ্রাম ৮ আসনের নির্বাচন নিয়ে কার্যত দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা মনে করেন, এখনই ১ দফা আন্দোলন করার উপযুক্ত সময় নয়। বরং ধাপে ধাপে সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করা দরকার এবং সেইজন্য তিনি চট্টগ্রাম ৮ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষপাতী।
জানা গেছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও চট্টগ্রাম ৮ আসনে নির্বাচনের পক্ষে। তবে উপনির্বাচনে অংশগ্রহনের ব্যাপারে তারেকের আগ্রহ ভিন্ন। কারণ এই আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে মনোনয়ন বাণিজ্য করা যাবে এবং তারেক কিছু অর্থকড়ি পাবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন যে, সরকারের সাথে সমঝোতা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব এবং তাঁর এই মতের সাথে দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে। বিশেষ করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সেলিনা রহমানসহ আরো কয়েকজন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সমর্থন করেন।
অন্যদিকে বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে অধিকাংশ নেতা মনে করেন, সরকারের সাথে আপোষ, সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করার এটাই ভালো সময় বলে মনে করেন। এজন্য তাঁরা তিনটি করনীয় ব্যাপারে দলের মধ্যে প্রচারণা করছে।
প্রথমত- ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া হলে ১ দফা আন্দোলন শুরু করা হবে এবং এই ১ দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দিয়ে এক দফা আন্দোলনকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চায়।
দ্বিতীয়ত- বিএনপির এই অংশ মনে করছে বিএনপির যে সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে যেহেতু বিএনপি মনে করে এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়নি এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে হয়নি। কাজেই এই নির্বাচনে যারা সংসদে গেছেন বা উপজেলা চেয়াম্যান হয়েছে তাদের পদত্যাগ করা। এর ফলে সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি হবে।
তৃতীয়ত- বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া।
তবে এই কোন্দলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ জয়ী হবেন তা এখনো অনিশ্চিত। আন্দোলনের শুরুতেই দ্বিধা বিভক্ত বিএনপি আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়েব কিনা সেটাও দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।