নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। এই কাউন্সিলকে ঘিরে আওয়ামী লীগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে দল এবং সরকার আলাদা করা। এরপক্ষে বিপক্ষে নানা রকম মত আছে। বলা হচ্ছে জাতির পিতার যে চেতনা ছিল দলকে শক্তিশালি করতে হলে যারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন তারা মন্ত্রীত্বে থাকবেন না। সেই নীতিতে আওয়ামী লীগ পুন:প্রতিষ্ঠিত হোক এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময় একাধিক বক্তৃতায় এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছেন।
অন্যদিকে অন্য একটি পক্ষ মনে করছে যে, দল থেকে যদি সরকারকে আলাদা করা হয় তাহলে দল দুর্বল হয়ে পড়বে। দলের যে নীতি আদর্শ তা সরকারের প্রতিফলিত করা কঠিন হয়ে যাবে। এরকম একটি বিতর্কের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, টানা তিন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার স্পষ্টত দল এবং সরকারকে আলাদা করার নীতি নিয়ে এগুচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আনছেন। যারা দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সফলতাও দেখাচ্ছেন। সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্য রয়েছেন যারা বড় নেতা নন কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে অনেক বড়। এদের কয়েকজনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন;
আ হ ম মোস্তফা কামাল
একটি সরকারের অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে না থাকলেও তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের একজন নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তার দায়িত্ব পালনে দলেরও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করছেন। কেন্দ্রীয় নেতা না হলেও মন্ত্রীত্ব চালাতে তার কোন সমস্যা হচ্ছে না।
জাহিদ মালেক
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাহিদ মালেক। গত মেয়াদে তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালণ করেছেন। এ মেয়াদে তিনি পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। জাহিদ মালেকও কেন্দ্রীয় নেতা নন। মানিকগঞ্জের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় চালাতে তার কোন সমস্যা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে দলের নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে না।
তাজুল ইসলাম
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে একটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে সচরাচর নেওয়া হতো দলের সাধারণ সম্পাদককে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং শেখ হাসিনা এই রীতি ভেঙে দেন এবং গত মেয়াদে তিনি সাধারণ সম্পাদকের বাইরে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেন। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তাজুল ইসলামকে দলের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাজুল ইসলাম দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা নন, কেন্দ্রীয় কমিটিরও কোনো সদস্য নন। কিন্তু মন্ত্রীত্ব চালাতে গিয়ে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ
বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদও দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা ছিলেন না। তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ করে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু জাভেদ তেমন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে না এলেও ভূমি মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই। দলের নীতি এবং আদর্শ অনুযায়ী তিনি মন্ত্রণালয় চাণাচ্ছেন, এই ক্ষেত্রে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
আনিসুল হক
সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হচ্ছে আইন, বিচার এবং সংসদ মন্ত্রণালয়। সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নেই। দলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দলের নীতি আদর্শ অনুসরণে দল চালাতে তার কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। দল এবং সরকারের মধ্যে ভারসাম্যেরও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
মোস্তাফা জব্বার
টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রীত্ব পাওয়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন। এজন্য আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহার, নীতি-কৌশল, সেই নীতি কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। বরং দলের নীতি আদর্শ অনুসরণ করেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগে এরকম অনেক মন্ত্রীই রয়েছেন, যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা নন, কিন্তু দলে নীতি আদর্শ অনুসরণ করেই তারা দল পরিচালনা করছেন এবং সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কাজেই সরকার এবং দলকে আলাদা করার যে নীতি এবং কৌশল, সেটা আওয়ামী লীগে অনেকটাই কার্যকর হয়েছে। এখন আগামী কাউন্সিলে এই অবস্থান থেকে আরও কতটুকু অগ্রগতি হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন