নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর মনে করা হয়েছিল যে বিএনপি বোধহয় এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে বিএনপির ৬জন এমপি যেমন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন, তেমনি পরবর্তী সব ধরনের নির্বাচনগুলোতেও বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে।
তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রধান অভিযোগ ছিল বিএনপির প্রার্থীরা সুষ্ঠভাবে নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারেনি, প্রচারণাকাজে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার বিএনপি সেই অভিযোগ করছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে, আজকের দিন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে। প্রচারণা করতে তারা কোনো বাধা পাচ্ছেন না। একইরকম মন্তব্য দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাক হোসেনও।
অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি তুলনামূলক চাঙা। নেতাকর্মীরা প্রথমদিকে একটু আড়ষ্ট থাকলেও এখন আস্তে আস্তে প্রচারণায় নামছে। কেন বিএনপি চাঙা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে বেশকিছু কারণ। সেগুলো হলো-
বিএনপি কোনো বাধা পাচ্ছে না
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে বিএনপি অভিযোগ করে। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা তাদের মাঠেই নামতে দেয়নি। যেকোনো কোথাও প্রচারণায় গেলে তাদের বাধা দেওয়া হতো। এবার তারা সেই বাধা পাচ্ছে না বলে দলের নেতাকর্মীরা প্রচারণার জন্য মাঠে নামছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষ ভূমিকা
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা। বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফন্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই নির্বাচনে তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এমনকি বিএনপির যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে তাদেরকেও নির্বাচনী প্রচারণায় সরব দেখা যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা কোনো বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা বিএনপিকে উজ্জীবিত করছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
অতীতের নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অভিযোগ ছিল যে, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে। এবারও নির্বাচনী প্রচারণার শুরতেই বিএনপি একই ধরণের অভিযোগ করেছিল। কিন্তু মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং আমির হোসেন আমু আর তোফায়েল আহমেদকে নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে এরকম কঠোর অবস্থানের পরে বিএনপির সুর পাল্টেছে। বিএনপি এখন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর কোন বক্তব্য রাখছে না। নির্বাচন কমিশনের এই পরিবর্তিত রুপ বিএনপিকে চাঙ্গা করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে।
সরকারের ভূমিকা
বিএনপি দেখছে যে এই নির্বাচনে সরকারের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ, যেকোন মূল্যে নির্বাচনে জিততে হবে- এরকম কোন মনোভাব দেখাচ্ছে না। বরং সরকার একটি অবাধ-সুষ্ঠ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। এর ফলে বিএনপি মনে করছে এবারের নির্বাচনটি অবাধ-নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে সরকার কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না। এটার ফলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার আলো জেগেছে।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা
অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে যেমন নির্বাচনের শুরু থেকে প্রশাসন আওয়ামী লীগকে জেতানোর জন্য দৌড়ঝাপ কেরে সেরকম প্রবণতা এবার লক্ষ্য করা যায়নি। বিশেষ করে রিটার্নিং অফিসার বা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবার তুলনামূলকভাবে পক্ষপাতিত্বে নিজেদের দূরে রেখেছেন। ফলে এই নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি ক্রমশ আশাবাদী হয়ে উঠছে।
বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নির্বাচন যদি মোটামুটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। এই নির্বাচন যদি মোটামুটি নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমরা জিতবো। এখন পর্যন্ত প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন না। ভবিষ্যতে কি হবে তা বলা যায় না। হয়তো শেষ বেলায় এসে ভোটের বাক্স তারা ভরাবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যোগ্য প্রার্থী দিয়েছে। জনগণ জানে যে, আওয়ামী লীগই একমাত্র ঢাকার উন্নয়ন করতে পারবে। তাই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগন যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।