নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ১৪ জানুয়ারী, ২০২০
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক চলছে। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মন্ত্রী এমপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না পরিপত্র জারির দাবি জানিয়েছেন। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং এমপিরা ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। নির্বাচন আচরণবিধির ২২, ২৩, ২৪ এবং ১৫ ধারায় নির্বাচনে সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সরকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নির্বাচন পরিচালনায় বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই আচরণবিধিতে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এ সমস্ত ব্যক্তিরা এলাকায় প্রচারণা এবং নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচনে পূর্ব সময়ে প্রতিনিধির পক্ষে সরকারী কোন ব্যাক্তি সংস্থা, সরকারী প্রচারযন্ত্র, যানবাহন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন না।
কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারী উন্নয়ন কর্মসূচীতে কর্তৃত্ব করতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতেও অংশ নিতে পারবে না। কোনো প্রার্থী যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে হয়ে থাকেন তবে নির্বাচনপূর্ব সময়ে তিনি সেখানকার কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়াও আচরণবিধিতে বলা হয়েছে- নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না। আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনপূর্বকালীন সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়িত্তশাষিত উন্নয়ন তহবিল যুক্ত কোন প্রকল্পের অনুমোদন ঘোষণা এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে না। আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোন সরকারী সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারী আধা সরকারী স্বায়ত্ব শাষিত প্রতিষ্ঠানকে কেন রকম অনুদান বা বরাদ্দ দিতে পারবে না।
এই সমস্ত বিধি নিষেধ সত্বেও আইনজ্ঞ এবং নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এই আচরণ বিধিতে অনেক ফাঁকফোকর আছে। সেই ফাঁকফোকর দিয়ে মন্ত্রী এমপিরা অনেককিছুই করতে পারেন এবং ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার কাজটিও করতে পারেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী যে কাজগুলো তারা করতে পারেন না তা হলো; নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা এবং জনগনের কাছে ভোট চাওয়া।
কিন্তু যে কাজগুলো তারা করতে পারবেন তা হলো; ঘরোয়া কর্মী সমাবেশ, মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীদের যে কর্মী তাদেরকে নিয়ে তিনি ঘরোয়া কর্মী সমাবেশ করতে পারবেন। যেখানে তিনি কর্মীদের দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন এবং বলতে পারবেন কোন এলাকায় কি অবস্থা। কোন এলাকায় কি সমস্যা রয়েছে এবং সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়। তার নির্বাচনী এলাকার সমস্যা নিয়ে তিনি সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন। সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে তারা আলাপ আলোচনা করতে পারবেন। এই সমস্যা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি সিটি নির্বাচন পরোক্ষভাবে আসে তা নির্বাচন আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রী এমপিরা সমন্বয় সভা করতে পারবেন। যে সমন্বয় সভার প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়তে পারে।
বিভিন্ন রকম প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন নির্বাচন যেসময় হচ্ছে, সেই সময়ে স্কুলগুলোতে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতামূলক অনুষ্ঠান, সাহিত্য প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীতা হয়। এসব প্রতিযোগীতায় মন্ত্রী এবং এমপিরা অংশ নিতে পারবেন এবং বক্তব্য রাখতে পারবেন। এসব বক্তব্যে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে।
পুনর্মিলনী, বিয়ের অনুষ্ঠান, মিলাদে যেতে পারবেন। সেখানে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। ভোটারদের পরামর্শ দিতে পারবেন। কারা এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর এলাকার উন্নয়ন কীভাবে নির্ভর করছে- সে বিষয়ে তিনি ভোটারদের পরামর্শ দিতে পারবেন। তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারবেন।
অসুস্থ কাউকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির সৎকার বা কুলখানিতে যেতে পারবেন। সরাসরি ভোট না চেয়ে প্রার্থীদের কাছে কীভাবে প্রত্যাশার কথা জানানো যায়- সেই বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ কাজগুলো করার ক্ষেত্রে আচরণবিধিতে কোনো বাধা নেই। এই কাজগুলোর মাধ্যমে একজন মন্ত্রী বা এমপি সহজেই নির্বাচনে এবং ভোটারদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।