নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারী, ২০২০
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ছে। মন্ত্রীরা যেন দুর্নীতির সঙ্গে না জড়ায়, মন্ত্রীদের যেন কোন বদনাম না হয়, নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণাগুলো দেওয়া হয়েছিল সেই ঘোষণার আলোকে যেন মন্ত্রীরা কাজ করেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত এক বছরে মন্ত্রীরা যে সমস্ত কার্যক্রম করেছে, সেসব কার্যক্রমের রিপোর্ট কার্ড এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরই এই রিপোর্টের আলোকে মন্ত্রিসভার রদবদলের কথাও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভার রদবদল হবে না। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, মন্ত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং মন্ত্রীরা যেন দুর্নীতিতে জড়িয়ে না পড়ে এজন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা আসতে পারে। এর মধ্যে আছে;
১. রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ বন্ধ:
আগে মন্ত্রীদের পছন্দের পিএস এবং এপিএস দেওয়া হত। এটি সাধারণত দেওয়া হত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এপিএসদের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ বন্ধের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের আলোকে এবার ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় যেভাবে এপিএস নিয়োগ করা হয়েছিল, উপসচিবদের মাধ্যমে। ঠিক একইভাবে সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্য থেকে এপিএস নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া এপিএসদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ওঠে।
২. দলের কাছে মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা:
মন্ত্রীরা দলের নির্বাচিত ব্যক্তি হিসেবেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন, দলের নীতি আদর্শ এবং দল ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে তাদের মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করছেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের অবস্থা খুব সুস্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরেই নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই আলোকেই তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছিলেন এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন কতটুকু অগ্রগতি হচ্ছে তা মনিটরিং করারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কিন্তু অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ে এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা মনে করছেন। এজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা যে বিষয়ে দায়িত্বে রয়েছেন, যেমন যিনি ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, তিনি ঐ মন্ত্রণালয়ের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি করছে- সেই ব্যাপারে জবাবদিহিতা করবে। মন্ত্রীদেরকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ ব্যাপারে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।
৩. সংসদীয় কমিটিকে কার্যকর করা:
মন্ত্রীদের নজরদারি এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য সংসদীয় কমিটিকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটিগুলোতে মন্ত্রীরা যেন উপস্থিত হন এবং মন্ত্রীদের কার্যক্রম যেন মূল্যায়ন করা হয়, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে সংসদের স্পিকার সংসদীয় কমিটিকে কার্যকর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়মিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক এবং বৈঠকে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
৪. সব বিষয়ে কথা না বলা:
মন্ত্রীদের নজরদারির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে, সেটি হলো মন্ত্রীদের বাক সংযত করা। সব ধরনের বিষয়ে তারা যেন কথা না বলেন এজন্য মন্ত্রীদের ওপর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে। কারণ দেখা যায় যে, একই বিষয়ে এক এক মন্ত্রী এক একরকম কথা বলে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ সংকটের সময় এক এক মন্ত্রীর এক এক মন্তব্য নিয়ে সরকার একটি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। এ কারণে মন্ত্রীদের বক্তব্য তাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে এবং দলীয় মুখপাত্র ছাড়া কেউ অন্য বিষয়ে বক্তব্য রাখতে পারবেন না এরকম একটি নির্দেশনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
৫. মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়গুলোতে পরিদর্শন করা:
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের পরপরই তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছিলেন।
৬. মনিটরিং সেল:
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হতে পারে এবং প্রধামন্ত্রীর মূখ্য সচিবের নেতৃত্বে এইধরনের মনিটরিং সেল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমগুলো পর্যবেক্ষণ করবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো যে অঙ্গীকার পেয়ে তাঁরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সেই নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা এবং পাঁচ বছরের মেয়াদে যেন সেই ইশতেহারের শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আর সেজন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে আরো কার্যকর এবং মন্ত্রীদের দায়িত্ববান করার জন্য এইরকমের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরা মনে করছে, এই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা যেমন বাড়বে তেমনি মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আসবে।
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।