নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারী, ২০২০
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানা মত-পথ। বিএনপি সিনিয়র নেতারাই কোন রাখঢাক ছাড়াই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছে এবং এইসমস্ত বক্তব্যের ফলে সিটি নির্বাচনের ১০ দিন আগেই বিএনপি প্রায় ছিটকে পড়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, দিকনির্দেশনাহীন নেতৃত্বের কারণেই নির্বাচনে পরিকল্পিত প্রচারণা করতে পারছে না বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, সিটি নির্বাচনে মিএনপির জন্য একটা ভালো সুযোগ ছিল। সব নেতারাই যদি এই নির্বাচনে মাঠে নামতেন এবং নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নিত তাহলে একটি আলোড়ন তৈরি হতে পারতো। কিন্তু বিএনপির নেতারা যেন বসন্তের কোকিল, যাদের মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়। যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ দিনের প্রচারণায় মাত্র ২ দিন মাঠে নেমেছেন। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় সরব দেখা যায়নি। মির্জা আব্বাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যস্ত থাকলেও উত্তরে তাকে একেবারেই দেখা যায়নি। অথচ তিনি অভিন্ন ঢাকার মেয়র ছিলেন। অথচ তাঁকেও এবারের নির্বাচনী মাঠে দক্ষিণে দেখা পাওয়া গেলেও উত্তরে দেখা যায়নি।
বিএনপির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই নির্বাচনের শুরুতে কিছুটা সরব থাকলেও এখন একেবারেই নিরব হয়ে গেছেন। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির স্বেচ্ছাবন্দি নেতা রুহুল কবির রিজভী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল করে আলোচনায় আসতে চাইছেন। এ রকম ভাবে বিএনপির পরিচিত মুখ ও নেতৃবৃন্দ কেউই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে মনোযোগী নয়।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রচারণা সম্পূর্ণ দুই প্রার্থী কেন্দ্রীক হয়ে পড়ছে। আর এটাকে বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন নেতৃত্বের ব্যর্থতা। বিএনপির নেতৃবৃন্দ নিজেদের একাট্টা করে এই নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে নামাতে পারেনি। এই সমস্ত অভিযোগই আসছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সিনিয়র নেতাদের ভাগ করে দিতে পারতেন। বিশেষ করে যারা যেই এলাকার তাদেরকে সেই এলাকার মাঠে নামানো গেলে নির্বাচনে দুই প্রার্থীর উপর চাপ যেমন কমতো তেমনি বিএনপির নেতাকর্মীরাও আরও বেশি নির্বাচনী প্রচারণায় সম্পৃক্ত হত। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির নেতৃবৃন্দের কোনো পরিকল্পিত রূপরেখা নেই।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলেন সিরিয়র নেতাদের এক সূত্রে গ্রন্থিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেতা হিসেবে তিনি ব্যর্থ।
বিএনপির দুই মিত্র দলের নেতৃবৃন্দের এই নির্বাচনে কোনো অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে না। ২০ দলীয় জোটের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচনের মাঠে সরব নন।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দুই মেয়র প্রার্থীকেই সমর্থন জানান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গণফোরামের হেভিওয়েট নেতা ড. কামাল হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সায়ীদ কাউকেই নির্বাচনী প্রচারণায় তাবিথ কিংবা ইশরাকের পক্ষে দেখা যায়নি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একমাত্র মাহমুদুর রহমান মান্না উত্তরা এলাকায় কিছু প্রচারণায় তাবিথের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ইদানিং তাকেও দেখা যাচ্ছে না। ঐক্যফ্রন্টের আ.স.ম আব্দুর রব কিংবা জাফরুল্লাহর মতো নেতারাও নির্বাচনের মাঠে নেই।
কাজেই মনে করা হচ্ছে এই নির্বাচনে বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি আবার সামনে উঠে এসেছে। বিএনপি মনে করছে মহাসচিব পদে সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য নেতা ছাড়া দলকে চাঙ্গা বা সংগঠিত করা যাবে না।
বিএনপির নেতারা এটাও মনে করছেন এই নির্বাচনে বিপর্যয় হওয়ার পর বিএনপির আরো ভেঙে পড়বে। আর বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এ কারণেই সিটি নির্বাচনের এই ডামাডোলের মধ্যে বিএনপিতে নেতৃত্বে পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি হচ্ছে।
বিএনপির কোন কোন নেতা লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। তারা মহাসচিব পরিবর্তনের জন্য লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়ার কাছে আবদারও করেছেন। তারেক জিয়া তাদের বলেছেন, সিটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তিনি দলের কাউন্সিল করবেন বা নেতৃত্বের পরিবর্তন করবেন।
উল্লেখ্য যে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর বিএনপিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরী হয়েছিল। এই বছরের শেষদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা খুব শীঘ্রই কাউন্সিল অধিবেশন করবে। কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে তারা কাউন্সিল অধিবেশন করেনি। তবে সিটি নির্বাচনে বিপর্যস্ত হলেই বিএনপিতে নেতৃত্বের দাবি আরও জোরালো হবে, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ যারা নেতৃত্বে ব্যর্থ তাদের সরে যেতে হবে বলেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।