নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৭ জানুয়ারী, ২০২০
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিকে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দুই সিটি করপোরেশনই। বিশেষ করে ঢাকা উত্তরের প্রধান দুই দলের প্রার্থী, বিএনপির তাবিথ আউয়াল এবং আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভোটের মাত্র চারদিন আগে নির্বাচনে কোন প্রার্থী যোগ্য এবং কাকে ভোট দিলে কি লাভ হবে তার হিসেবনিকেশ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থীর মাঝে কে যোগ্য তা বিশ্লেষন করেছে ‘বাংলা ইনসাইডার’ এবং দুই প্রার্থীর তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা আর ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে।
এক ৯ মাসের অভিজ্ঞতা বনাম ১০ বছরের হোমওয়ার্ক
আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে এসেছিলেন আকস্মিকভাবে। যদি আনিসুল হক জীবিত থাকতেন, তাহলে আতিকুল ইসলাম কখনোই মেয়র হিসেবে আসতে পারতেন না। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর নাটকীয়ভাবে পাদপ্রদীপে আসেন আতিলুল ইসলাম এবং প্রায় ৯ মাস দায়িত্বপালন করেছেন তিনি। এই ৯ মাসে ভালো-মন্দ মিলিয়ে তার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে যেমন হিমশিম খেয়েছেন, তেমনি নগরীতে কিছু কিছু বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে আলোচিত হয়েছেন। যেখানে গুলশান-বনানী এলাকার যানযট কমানোর জন্য ঢাকার চাকা করেছিলেন আনিসুল হক, সেখানে আতিকুল ইসলাম আবার গুলশান চাকা চালু করে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক না কেন, ১০ মাসের অভিজ্ঞতা তাকে আগামী দিনের দায়িত্বপালনে পথ নির্দেশনা দিবে এবং এই অভিজ্ঞতা তাকে আগামী মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে আতিকুল ইসলাম যেমন দাবি করছেন, তেমনি অনেক ভোটার তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করছে।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গত নির্বাচনেও নির্বাচন করেছিলেন। তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মেয়র হিসেবে নির্বাচনের জন্য আগ্রহী ছিলেন এবং এজন্য তাঁর প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছিলেন। আর এই নিয়ে তাঁর একাধিক গবেষণা রয়েছে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের সমস্যা নির্ধারণ এবং সেই সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে প্রচুর হোমওয়ার্ক রয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে এই গবেষণা তিনি করেছেন এটা রাজনৈতিক মহলে সবাই জানে। তাবিথ আউয়াল প্রার্থী হবার পর এই গবেষনাপত্রটি এখন তাবিথের হাতে। কাজেই ১০ বছরের হোমওয়ার্ক করা একটি পুর্ণাঙ্গ গবেষণালব্ধ দলিল রয়েছে তাবিথের কাছে এবং এই দুই যোগ্যতার ভিত্তিতে কে এগিয়ে তা বলা মুশকিল।
পরিশ্রমী আতিক, বুদ্ধিদীপ্ত তাবিথ
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আতিকুল ইসলাম প্রমাণ করেছেন যে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নির্বাচনের চারজন প্রার্থীর মধ্যে প্রচারণায় তিনি ছিলেন সবথেকে ব্যস্ত এবং এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রচারণায় ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত। তিনি বেশকিছু প্রচারণার কৌশল অবলম্বন করেছেন। কখনো তিনি প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হবার অভিনয় যেমন করেছেন তেমনি তিনি বিভিন্ন শ্রেনী পেশা, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন এলাকার মানুষদের একত্রিত করার ক্ষেত্রেও নানান কৌশল অবলম্বন করেছেন। এখন কৌশল আর পরিশ্রমের লড়াইয়ে কে বিজয়ী হয়, সেটা দেখার বিষয়।
বাস্তব পরিকল্পনা বনাম উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন
আতিকুল ইসলাম এবারের নির্বাচনে ৩৮ দফা উন্নয়ন পরিকল্পনা দেন। এই পরিকল্পনাগুলোকে নগর বিশ্লেষকরা মনে করছে, কেউ যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন, তাহলে এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আর অন্যদিকে তাবিথ আজ যে ১৯ দফা কর্মসূচী দিয়েছেন, তাতে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং তিনি দুই মাসে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটাকে অনেকে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা মনে করছেন। একদিকে আতিকের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা অন্যদিকে তাবিথের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন- এই দুইয়ের ভেতর জনগণ কাকে বেঁছে নিবে সেটা দেখার বিষয়।
ডেঙ্গু বিতর্কে আতিক, ডেঙ্গু টার্গেট তাবিথের
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরের ডেঙ্গু একটি বড় বিতর্কের বিষয় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গতবার ডেঙ্গু যেমন ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এই নিয়ে সিটি করপোরেশনসহ প্রশাসনের ব্যর্থতা, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছিল। সেই বিবেচনায় আতিক একটু পিছিয়ে রয়েছেন আর এই কারণেই তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তাবিথ আউয়াল ডেঙ্গু মোকাবেলাকেই তাঁর প্রধান নির্বাচনী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই ডেঙ্গু ইস্যুতে কিছুটা হলেও আতিক পিছিয়ে থাকবেন।
সাধারণ মানুষদের আতিক, এলিটদের তাবিথ
এবার নির্বাচনী প্রচারণায় আতিক সাধারণ মানুষদের উপর বেশি ভরসা রেখেছেন। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যারা গরীব, দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষ তাদেরকেই টার্গেট করেছেন বেশি। অন্যদিকে তাবিথ একটু এলিট শ্রেনীর দিকে ঝুঁকেছেন এবং এলিট শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করছেন এরকম একটি অবয়ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ আর এলিটদের লড়াইয়ে কে জয়ী হন, সেটাই দেখার বিষয়।
নির্বাচনের যোগ্যতার বিচারে দেখা যাচ্ছে যে, দুই প্রার্থীই প্রায় সমানে সমান এবং শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কে জয়ী হন তা এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।