নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারী, ২০২০
সিটি নির্বাচনে শক্তি প্রদর্শন করার জন্য এবং সিটি নির্বাচন পরবর্তীতে একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরীর জন্য বিএনপি নেতারা ঢাকায় এসেছেন। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে বলেছেন যে, বিএনপি ঢাকার বাইরে থেকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসেছে। নির্বাচনে তারা গোলযোগ করতে চায়। ওবায়দুল কাদেরের এই সূত্র ধরে বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এই মন্তব্য করেছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এবারের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছে। শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা ভোটকেন্দ্রগুলোতে ‘পোড়া মাটি’র নীতি অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই খুব গোপনে পর্যায়ক্রমে গত প্রায় ১৫দিন ধরে তাদের নেতাকর্মীদেরকে ঢাকায় জড়ো করেছেন এবং তারা ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন। বিএনপি জানে যে, বিভিন্ন হোটেলে নির্বাচনের আগে তল্লাশি হতে পারে। হোটেলগুলো তাদের জন্য নিরাপদ নয়, এই বিবেচনায় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বাসভবনে এবং ভাড়া করা বাড়িতে তাঁরা অবস্থান করছে।
বিএনপির একাধিক নেতারা বলেছেন, ঢাকায় যারা বিএনপির নেতৃস্থানীয় তাঁরা পরিচিত মুখ এবং তাদেরকে ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ করায়ত্ত করতে পারে। এজন্য তাঁরা ঢাকার বাইরে থেকে অপেক্ষাকৃত আনকোরা, অপরিচিত মুখ নিয়ে এসেছে। যারা একাধিক মামলার আসামী, যারা ভয়ভীতিতে দমে যাবেনা এবং যারা অপরিচিত হবার কারণে কেনাবেচার সুযোগ থাকবে না।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, এই যে ২০ হাজার নেতাকর্মী এসেছে তাঁরা যে শুধু ভোটকেন্দ্র পাহারা দিবে এমন না, নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও তাদেরকে ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু নির্বাচন আইনানুযায়ী ঐ এলাকার ভোটার ছাড়া অন্য ব্যক্তি নির্বাচনী এজেন্ট হতে পারে না, সেই বিবেচনা থেকে তাঁরা হয়তো নির্বাচনি এজেন্ট হতে পারবে না কিন্তু এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোর চারপাশে থাকবে। অন্য একটি সূত্র বলছে, ঢাকায় যারা বিএনপির নেতাকর্মীরা আছে, তাঁরা যদি অঘটন বা অশান্তি তৈরি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সহজ হলেও যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সহজ নাও হতে পারে। এই বিবেচনা থেকে বিএনপি তাদেরকে জড়ো করেছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, বিএনপির অন্যরকম পরিকল্পনা থেকেই বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের জড়ো করছে।
তাদের পরিকল্পনার একটি হচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে অশান্তির সৃষ্টি করা এবং গায়ে পড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ তৈরি করা। কারণ বিএনপি মনে করছে যে কোনো সহিংসতা বা সন্ত্রাস হলে তার দায় আওয়ামী লীগের উপরই বর্তাবে। কারণ আওয়মী লীগই এখন ক্ষমতায় আছে।
দ্বিতীয় যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা হলো, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়। তাহলে এই নেতাকর্মীদেরকে সহিংসতার জন্য দেখা করা এবং ঢাকায় অবস্থানসহ নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে তারা একটি অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইবে।
তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা জানতে পেরেছে ঢাকায় অনেক বহিরাগত এসেছে। আর এই বহিরাগতরা যদি আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করতে চায় তাহলে তাদের প্রতিরোধ করার মতো দক্ষতা এবং সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন