নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারী, ২০২০
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনী চাপ অনুভব করছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এসে শেষ মুহূর্তে দলটির মধ্যে নার্ভাসনেস, অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা সবই দৃশ্যমান হচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচনে তারা দুজন ভালো প্রার্থী দিয়েছে। তাই এই নির্বাচনে তারা পরাজয়ের কোনো কারণ দেখেন না। কিন্তু নির্বাচনে জয় পরাজয়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ নানা কারণে অস্বস্তি অনুভব করছে।
প্রথমত, বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রমাণ করার জন্য নানা রকম কৌশল গ্রহণ করছে। আর শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে দুই সিটির নির্বাচনে জিতলেও আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে।
দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি যে শো ডাউন করছে এবং যে ধরণের কর্মী সমাবেশ করছে, নির্বাচনের পর ভোট কারচুপির অভিযোগ বিএনপি যদি রাজপথে আন্দোলন শুরু করলে সেই আন্দোলন দমন করাও আওয়ামী লীগের কঠিন হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়নি এই প্রপাগান্ডা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তৃতীয়ত, এই নির্বাচনে কুটনৈতিক মহলে একটা সরব তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কুটনৈতিকরা কেনো এত সরব এ নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে কুটনৈতিকদের এই সরব তৎপরতার পেছনে বিএনপির এবং জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের একটি ইন্ধন রয়েছে। তাদের আগ্রহের কারণেই কুটনৈতিকরা নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহী হয়েছে।
আর এই সমস্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই আওয়ামী লীগ মনে করছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জর। চ্যালেঞ্জ হওয়ার কারণ এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই জয়ী হতে চায় কিন্তু সেই জয়টি তারা বিতর্কমুক্ত চায়। আওয়ামী লীগ একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হতে চায়। কিন্তু যদি কোনো রকমের অঘটন ঘটে, কোনো রকমের সহিংসতার সৃষ্টি হয়, ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যায় কিংবা ভোটে যদি কোনো রকমের কারচুপির অভিযোগ উৎথাপিত হয়, সেটা আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কারণ হবে। তখন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সব নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ জোড়ালো ভাবে উপস্থাপন করবে বিএনপি। এর পাশাপাশি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্ভব না সেরকম একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।
আওয়ামী লীগের অন্য একটি পক্ষ বলছে চাপ অনুভর করার আরেকটি কারন হচ্ছে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির প্রচার প্রচারণা। কারণ এবার বিএনপি প্রায় আওয়ামী লীগের সমান্তরাল গতিতে প্রচারণা চালিয়েছে। আর বার বার তারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছে নির্ভয়ে ভোট দিতে বলেছে।
টানা ১১ বছর আওয়ামী ক্ষমতায় রয়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব জনগণের মধ্যে থাকে। তাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচনে কোনো আশাতীত ফলাফল করে ফেলে সেটাও আওয়ামী লীগের জন্য বিপদের কারণ হবে। কারণ সে সময় বিএনপি বলবে নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারে না তার প্রমাণ হলো সিটি নির্বাচন। অথবা এটা বলা সহজ হবে আওয়ামী লীগ তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঢাকায় দুই সিটির একটিতেও বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হয় তাহলে দলটি সাংগঠনিক ভাবে নিজেদের শক্তিশালী করার একটি বড় ধরনের সুযোগ পাবে। আর এ কারণেই উভয় সংকটে রয়েছে আওয়ামী লীগ। একদিকে নির্বাচনে জয়ী হলে তাদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ। অন্যদিকে নির্বাচনে হারলে তাদের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়েছে এমন অভিযোগ শুনতে হবে। আর এই দ্বিমুখী চাপ সামলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বিতর্কহীন ভাবে কিভাবে নেবে সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।