নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের পর থেকেই মাহবুবুল আলম হানিফ যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। নিজস্ব অনুষ্ঠান ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যাচ্ছে না খুব একটা। হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ থাকা অবস্থায় তিনি সরব হয়েছিলেন, কিন্তু তারপর আবার দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন কিভাবে?
বিএনপির সমালোচনা করা বা সরকারের পক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে তিনি এতটুকু পিছিয়ে নেই। বরং তিনি নিজস্ব বলয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বিএনপির সমালোচনা করছেন এবং বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে আগে যেমন তাকে পাশে দেখা যেত, তার বদলে বাহাউদ্দীন নাছিম কিংবা প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে দেখা যায়। মাহবুবুল আলম হানিফকে দেখা যায় না। এনিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই গুঞ্জন উঠেছে হানিফের সঙ্গে কি ওবায়দুল কাদেরের দূরত্ব তৈরী হয়েছে?
মাহবুবুল আলম হানিফ আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে প্রথম যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার অঅগের কমিটিতেও তিনি যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার অনেকেই ধারণা করেছিল, মাহবুবুল আলম হানিফ হয়তো প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হবেন, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাহবুবুল আলম হানিফ একই পদে বহাল থেকেছেন। তার বদলে আবদুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক- যারা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাঁরা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন যে, ওবায়দুল কাদেরের বলয়ে যারা, তারাই এবার আওয়ামী লীগের কমিটিতে ভালো জায়গা পেয়েছেন এবং ওবায়দুল কাদেরের প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান প্রেসিডিয়ামে এসেছেন। ওবায়দুল কাদেরের সমর্থনের কারনেই বাহাউদ্দিন নাছিম সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। মির্জা আজম সদস্য থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের উদ্যোগে এবং লবিং-এ এবং এবারের আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলেই অনেকে বিশ্বাস করেন। আর এখান থেকেই মাহবুব আলম হানিফের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের দুরত্বের খবর পাওয়া যায়। কারণ মাহবুবুল আলম হানিফ আশা করেছিলেন যে, তাকে হয়তো প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলছেন যে, এটা আওয়ামী লীগ সভাপতি সচেতন ভাবেই করেছেন। কারণ ওবায়দুল কাদেরের যে স্বাস্থ্যগত অবস্থা, সেক্ষেত্রে যেকোন সময়ে যদি ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে মাহবুবুল আলম হানিফ যেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে পারেন, এরকম একটি বিবেচনা থেকেই হয়তো মাহবুবুল আলম হানিফকে প্রেসিডিয়ামে আনা হয়নি। কিন্তু যে কারণেই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে গেলেই এ ব্যাপারে দুরুত্ব এবং সম্পর্কের শীতলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সাম্প্রাতিক সময়ে লক্ষ্য করা যায়, ওবায়দুল কাদের যে সংবাদ সম্মেলনগুলো করেছেন অধিকাংশতেই মাহবুবুল আলম হানিফ উপস্থিত ছিলেন না। কেনো তিনি উপস্থিত ছিলেন না তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা রকম গুঞ্জন রয়েছে।
আবার অনেকে মনে করেন মাহবুবুল আলম হানিফ তার নিজস্ব বলয় থেকে বক্তব্য রাখছেন। দলের মুখপাত্র হিসেবে যেহেতু ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখছেন সেজন্য সেখানে তিনি বক্তব্য রাখছেন না। কিন্তু যেটিই হোক না কেনো সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ওবায়দুল কাদের ঘনিষ্টদের একাধিকত্বের কারণেই হানিফ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন এ ধরণের কোনো কিছুই নয়। ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জনপ্রিয় এবং সকলের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যাকে যে দায়িত্ব দিচ্ছেন সে দায়িত্বই তারা পালন করছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন