নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২০
বাংলাদেশের যেকোন দূর্যোগ-দুর্বিপাকে রাজনীতিবিদদেরই সামনে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে, রাজনীতিবিদরাই নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষদের প্রধান সহায় হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু এখন যেন সময় পাল্টে গেছে। রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গেছে, রাজনীতিবিদরা জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকার তুলনায় নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছেন। তবে ব্যতিক্রম যে নেই এমন না, অনেক রাজনীতিবিদ নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করছেন। কেউ কেউ আহারের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু দলগতভাবে রাজনীতিবিদদের এমন তৎপরতা এবার অনুপস্থিত এবং এটা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমাদের রাজনীতিবদরা কি ব্যর্থ?
বাংলাদেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দেখা যায় যে, রাজনৈতিক দলগুলো সাংগঠনিকভাবে ত্রাণ তৎপরতায় যায়, বিভিন্ন সাহায্য করে, অসহায়দের মানুষদের পাশে দাঁড়ায় এবং এনজিও বা ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সহায়তা দান করে মাত্র। কিন্তু এবার করোনায় দেখা যাচ্ছে যে, রাজনীতিবিদদের তেমন কোন তৎপরতা নেই। ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এমপি এবং নেতৃবৃন্দ ত্রাণসহায়তায় নিয়োজিত আছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কোন ত্রাণ তৎপরতা বা পরিকল্পনা ঘোষণা দেয়নি।
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে তাঁর জেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সাধারণ ছুটির কারণে অভাব-অনটনে পড়েছেন- তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কোন ঘোষণা দেয়নি। অথচ এই আওয়ামী লীগই সবসময় দরিদ্র-অসহায় মানুষদের পাশে সবার আগে দাঁড়িয়েছিল এবং এটাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। আওয়ামী লীগ কেন এখনো সাংগঠনিকভাবে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি?
এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, যেহেতু আওয়ামী লীগ এখনো সরকারে আছে এবং সরকারী ব্যবস্থাপনায় সামগ্রিক বিষয়টি দেখা হচ্ছে, তাই আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। কিন্তু এরকম বক্তব্য ধোপে টেকেনা। তবে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ যে এখনো সাংগঠনিকভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, এটা ঠিক না। আওয়ামী লীগের এমপিরা এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সাহায্য করছেন এবং এটা সরকারের সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু অন্যান্য সময় যেভাবে আওয়ামী লীগ দুর্যোগ মোকাবেলায় বা অসহায়-দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যে উদ্যোগ আর ব্যবস্থাপনা দেখা যায়- এবার তা একেবারেই অনুপস্থিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
বিএনপিও আওয়ামী লীগের দেখাদেখি বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণ তহবিল গঠন করে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে বেশ দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা গিয়েছিল। যদি সাহায্যের পরিমাণ ছিল সামান্যই, তবুও তাঁরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আইলা বা সিডরের সময়েও বিএনপির এমন তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে কোন প্রকার ত্রাণ তৎপরতা বা ত্রাণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে যারা দিনমজুর বা স্বল্প আয়ের মানুষ যারা, দীর্ঘ ছুটির কারণে যারা এক অসহায় অবস্থার মাঝে পতিত হয়েছে তাঁদের পাশে বিএনপির কেউ নেই। বরং বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে নানান অকম বিবৃতি দিচ্ছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন। আর মনগড়া কথা বলছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও শুধু বক্তৃতা-বিবৃতির মাঝে নিজেদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রেখেছে। এখন পর্যন্ত তাঁরা সাংগঠনিকভাবে কোন ত্রাণ তহবিল বা দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য কোন বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। অথচ ১৯৮৮ এর বন্যার সময় তাঁদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ দরিদ্র মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য নানারকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন এবং এটা নিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর উপরে সন্তুষ্ট হয়েছিল।
অন্যদিকে বাম দলগুলো সবসময় গরীব-নির্যাতিত মানুষদের কথা বলে, অথচ এই বাম দলগুলোকেও এবার ত্রাণে বা গরীব মানুষের পাশে পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু তাঁরা সবসময় মেহনতি মানুষের কথা বলেই বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দেন। তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ কি কেবল বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করা, বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া আর নির্বাচনের সময় ভোট চাওয়া? জনগণের দুর্যোগে পাশে থাকার দায়িত্ব কি রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সরে গেছে?
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।