নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২০
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সরকারপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি?- রাজনীতিক অঙ্গনে এই প্রশ্নটি উঠেছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে লড়াই শুরু করেছেন, সেই লড়াইয়ে তিনি কী জিতবেন? এসব প্রশ্ন আজ রাজনীতিক অঙ্গনে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপরিচালনা করছেন তিনি। এই রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছিলেন। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিচুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে তার দক্ষতার নজির স্থাপন করেছেন। সে সময় তিনি ৯৭ এর বন্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই তিনি বিডিআর বিদ্রোহের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে। আর ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা তার দূরদৃষ্টি, তার বিচক্ষণতা এবং তার যোগ্যতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সে কারণেই এবার করোনা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সফল হবেন কিনা তা নিয়ে আশাবাদী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ আর সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসের চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটু পার্থক্য রয়েছে। করোনা ভাইরাস হলো বৈশ্বিক সমস্যা। এই ভাইরাস গোটা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। সারাবিশ্বকে এই ভাইরাস একটি সংকটে ফেলেছে। বিশ্বের বাইরে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। তারপরও বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার সামনে আছে।
প্রথমত; জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ
বাস্তবতা হলো, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা এখনও বিশ্বমানের নয়। বিশেষ করে, উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। তাই জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বিতীয়ত; অর্থনৈতিক সংকটের বৈরী বাতাস
করোনার কারণে সারাবিশ্ব থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ ঘরে থাকার যে উদ্যোগ, সেটার কারণে অর্থনৈতিক সংকটের বৈরী বাতাস বইতে শুরু করেছে।
তৃতীয়ত; গুজব এবং তথ্য সন্ত্রাস
করোনার কারণে গুজব এবং তথ্য সন্ত্রাস জনমনে নানারকম আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা এবং নানারকম আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।
এই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা কি পারবেন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে?
প্রথম সংকট অর্থাৎ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন আইসিইউ, ভেন্টিলেশন বা বিশেষায়িত হাসপাতাল ইত্যাদির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তেমনি আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত। তার চেয়েও বড় কথা হলো আমাদের বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোতে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো একেবারে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়া পর্যন্ত রয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে করোনা মহামারী আকার ধারণ করায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালির মতো রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশেও যদি মহামারী আকারে করোনা দেখা দেয়, তাহলে এদেশ যে খুব বিপদে পড়বে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কাজেই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো মানুষকে সচেতন করে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণ করোনার সংক্রমণ যেন বিস্তৃত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা।
দ্বিতীয় সংকট অর্থাৎ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই নানারকম উদ্যোগ নিয়েছেন। এগুলোর মাধ্যমে তিনি দক্ষতা এবং পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। অতীতেও তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রোল মডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। কাজেই অর্থনৈতিক সংকটে সাময়িকভাবে কাবু হলেও খুব বেশিদিন যে সংকট থাকবে না সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
তৃতীয় সংকট অর্থাৎ গুজব এবং তথ্য সন্ত্রাস হলো করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিনই নিত্যনতুন অসত্য-বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এর ফলে জন অনাস্থা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত লড়াইটা হলো জন আস্থার লড়াই। জনগণ যদি শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল থাকে বা তার সরকারের প্রতি আস্থাশীল থাকে, তাহলে এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তবে এখন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে মানুষের কল্যাণ চান, ভালো চান। জন আস্থার বিষয়টিতে শেখ হাসিনা সবার উপরে আছেন। সে কারণে আমরা আশাবাদী হতেই পারি যে অন্যান্য লড়াইয়ের মতো এই লড়াইয়েও শেখ হাসিনা জিতবেন।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন