নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ০৩ এপ্রিল, ২০২০
যেকোনো সংকট, সেটা ব্যক্তিজীবনে হোক, সামাজিক জীবনে হোক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে হোক- তা অফুরন্ত সম্ভাবনাও তৈরি করে। সংকটে অনেকের যোগ্যতার প্রমাণ হয়। সংকটে হাল ধরে অনেকে বীরের মর্যাদা পান, অনেকে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পান। বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একটি সংকট হিসেবে এসেছে। শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের সংকটই নয়, এই সংকটটি সামগ্রিক সংকট হিসেবে এসেছে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আমাদের সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যে দেশটি উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল, হঠাৎ করে সেই অগ্রযাত্রায় ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কিন্তু তারপরেও এই সংকটের মধ্যে কিছু মানুষ নিজেকে মেলে ধরেছেন এবং তাদের ওপর জনগণ আস্থা রাখতে পারছেন এবং তাদের ব্যাপারে মানুষ ইতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করার যে সুযোগটি পেয়েছিলেন, সেটি তারা কাজে লাগিয়েছেন এবং তারা প্রমাণ করেছেন যে যোগ্য বলেই নিজ নিজ স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
এই সংকটে অনেকেই নিজেদেরকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলা ইনসাইডারের বিবেচনায় এরকম ৫ জনকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি-
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আইইডিসিআরের মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আলোচনায় আসেন। তিনি সাবলীলভাবে কোনোরকম আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে বৈজ্ঞানিক শিষ্টাচার মেনে অত্যন্ত শান্ত, ধীরস্থিরভাবে যেভাবে টানা সংবাদ সম্মেলন করে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন- তাতে তিনি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ করেছেন। আইইডিসিআরকে তিনি যেমন জনগণের কাছে পরিচিত করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তিনি যে একজন যোগ্য পরিচালক, সেটিও প্রমাণ করেছেন।
ড. আহমদ কায়কাউস
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস এই জানুয়ারি মাসেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে তার জন্য একটা কঠিন পরীক্ষা ছিল এই করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করা। এর আগে যে সমস্ত আমলারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে ছিলেন, তারা মুখ্যসচিব হওয়ার আগেই আলোচিত এবং দক্ষ আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেদিক থেকে ততটা পাদপ্রদীপে ছিলেন না ড. আহমদ কায়কাউস। কিন্তু করোনার প্রকোপ আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে তিনি যেমন সক্রিয় করেন এবং নিজেকে নেতৃত্বের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যেভাবে তিনি ত্রাণ তহবিল গ্রহণ করেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয় সাধন করেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন- তাতে করে তিনি নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কেন শেখ হাসিনা তাকে মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম
মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নিয়োগটাও ছিল এক ধরনের বিস্ময়। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটা ছিল একটু চমক জাগানিয়া। আনোয়ারুল ইসলাম অবশ্য পদ্মাসেতুর কাজের জন্য সফল এবং আলোচিত ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে তিনি কতটা সফলতা দেখাতে পারেন তা নিয়ে হয়ত অনেকের সংশয় ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় তিনি যেভাবে পুরো প্রশাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ছুটিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যেভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন তাতে তিনি আবার প্রমাণ করেছেন যে শুধু সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে নয়, সচিবদের নেতা হিসেবেও তিনি যথেষ্ট যোগ্য। এই যোগ্যতার জন্যই তিনি এই দায়িত্বে এসেছেন।
জেনারেল আজিজ আহমেদ
সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সম্ভবত এটাই ছিল প্রথম কঠিন পরীক্ষা। কারণ ২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে খুব বড় ধরনের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়নি। আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী যে এখনো সবার কাছে এতটা আস্থাশীল প্রতিষ্ঠান তা আবারো প্রমাণিত হলো। এই করোনাভাইরাসের সময় যখন সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হলো, তখনই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হলো এবং জনগণের মধ্যে নতুন করে আস্থা তৈরি হলো। সেনাপ্রধান নিজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে গিয়েছেন এবং বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী মোতাযেন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার আস্থা এবং সেনাবাহিনীকে নামিয়ে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনি নিজের যোগ্যতা আরেকবার প্রমাণ করেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
করোনা সংকটের সময়ে বিরোধীদলের যে ভূমিকা, আলোচনা সমালোচনার বৃত্তে না থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কীট আবিস্কারের অনুমতি চেয়ে, সরকারকে সহযোগীতা করার প্রস্তাব দিয়ে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এই চিকিৎসক। তিনি যে দেশের স্বার্থকে অনেক বড় করে দেখেন তা এই করোনাভাইরাসের সংকটকালে প্রমাণ করেছেন।
এছাড়াও অনেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান আছে যারা করোনাভাইরাসের সংকটের সময় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাদের কারণেই হয়ত বাংলাদেশ এখনো করোনা পরিস্থিতির লাগাম এখন পর্যন্ত টেনে ধরতে পেরেছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এই টিমের সর্বাত্মক নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিচক্ষণতা, দুরদৃষ্টিতা আর প্রজ্ঞা নিয়ে নতুন করে আমাদের কিছ বলার নেই।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।