নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২১ মে, ২০২০
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে নেতার অভাব নেই। তবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তাকে একটি সাংগঠনিক পরিকাঠামো দিয়েছে। এই সাংগঠনিক পরিকাঠামো অনুযায়ী দলের সভাপতির পরের স্থান হল দলের প্রেসিডিয়ামের। এই প্রেসিডিয়ামকে বলা হয় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে এমন অনেক নেতা আছেন, যারা প্রেসিডিয়ামের সদস্য কিন্তু মাঠে জনগণ তাদের খুব একটা পাত্তা দেয় না। জনগণের মাঝে তাদের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নাই বা তারা জননেতা হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপিত করতে পারেননি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা হলেন সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী সংস্থা। দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অনেক সময় বলা হয় তিনি একজন মন্ত্রীর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যেহেতু দল ক্ষমতায় রয়েছে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্যতম বড় অর্জন হল একজনের প্রেসিডিয়াম পদ লাভ করা। এরকম অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন যারা দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের নীতিনির্ধারণী অনেক সিদ্ধান্তে হয়তো তাদের ভূমিকা থাকে কিন্তু মাঠে তাদের কোন ভূমিকা নেই। বিশেষ করে করোনাকালে তাদের ভুমিকাহীনতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এদের মধ্যে রয়েছেন-
কাজী জাফরউল্লাহ
কাজী জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের বিপদের দিনের পরীক্ষিত বন্ধু। দলের একনিষ্ঠ নেতা। শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। কিন্তু নির্বাচনী লড়াইয়ে তিনি ফরিদপুরের একটি আসন থেকে বারবার নাস্তানাবুদ হন। ওই এলাকাতে তিনি যে জনপ্রিয় নন নির্বাচনের ফলাফলই তা প্রমাণ করে। এমনকি গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারাটাই ছিল বিস্ময়, সেই নির্বাচনেও তিনি হেরে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি দলে বড় নেতা হতে পারেন, কিন্তু মাঠে তার অবস্থা খুব একটা ভালো না।
এবার করোনা সংকটকালেও তাকে মাঠে খুব একটা খুঁজে পাচ্ছেন না জনগণ। বরং ওই এলাকার এমপি নিক্সন চৌধুরীকেই দেখা যাচ্ছে ত্রাণ তৎপরতাসহ দুর্গত মানুষদেরকে নানা রকম সহায়তা করতে।
আবদুল মান্নান খান
আবদুল মান্নান খান ঢাকা-১ আসন থেকে ২০০৮ এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলাও রয়েছে। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনে তার ভূমিকার কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জায়গা দিয়েছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও মাঠে তার কোন ভূমিকা নেই। চার দেয়ালে বন্দী তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। মূলত দপ্তর সম্পাদক হিসেবেই তিনি ভালো পরিচিতি পেয়েছিলেন। ফাইল ওয়ার্ক করা, দাপ্তরিক কার্যক্রম করা, চারদেয়ালে বন্দী থাকাই তার অভ্যাস। তিনি মাঠের নেতা নন। এ কারণেই তিনি মাঠে লাপাত্তা। এমনকি করোনা সংকটের সময়ও তার নির্বাচনী এলাকায় তার কোনো পদচারণা দেখা যাচ্ছে না, মানুষের পাশে তিনি নেই।
রমেশ চন্দ্র সেন
রমেশ চন্দ্র সেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৯ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে কয়েকদফা নির্বাচিত এমপি। স্থানীয় নেতা হলেও জাতীয় নেতা হিসেবে তিনি তেমন পরিচিত নন। মাঠেও তাকে খুব একটা সরগরম দেখা যায় না। এই নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে তুলনায় রমেশচন্দ্র সেন বারবার নির্বাচিত হলেও তাকে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছায়াতেই থাকতে হয়। জাতীয় নেতার তকমা প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তার গায়ে লাগেনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ
দুই দফার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েছেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রী হিসেবে যতটুকু আলোচিত সমালোচিত ছিলেন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তততাই ম্রিয়মান এবং পর্দার আড়ালে থাকেন। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক হওয়ার পরও তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায় না। নির্বাচনী এলাকায় কিছু কিছু কর্মকাণ্ডের বাইরে তার পদচারনা নেই বললেই চলে।
পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে সবচেয়ে বড় একটি চমক ছিল পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। এবারও তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা অক্ষুন্ন করে রেখেছেন। কিন্তু জাতীয় নেতা হিসেবে জনসভায় বক্তৃতা বা গণমাধ্যমে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি একেবারেই অন্ধকারে। অনেকেই জানে না যে, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য নামে দলে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন। দলের বড় নেতা হলেও তিনি মাঠে একেবারে লাপাত্তা। এরকম আরও কিছু নেতা আছেন যারা দলে নেতৃত্ব পেয়েছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে রয়ে গেছেন একেবারে অপরিচিত।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।