নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২২ মে, ২০২০
রাজনীতি একটি নিরন্তর প্রয়াস। একজন রাজনীতিবিদ নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তোলেন। স্থানীয় পর্যায় থেকে, ছোট্ট পরিসর থেকে নিজেকে জাতীয় মঞ্চে উদ্ভাসিত করেন। একজন ক্ষুদ্র স্থানীয় নেতা বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কর্মী থেকে নিজের যোগ্যতা, গুণ এবং ধারাবাহিকতা দিয়ে একজন জাতীয় রাজনীতিতে স্থান করে নেন। জাতীয় রাজনীতির একজন তারকায় পরিণত হন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই রকম কিছু উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় তারকা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা রাজনীতিতে টিকতে পারেনি। নানারকম দৈব দুর্বিপাকে সেই সম্ভাবনাগুলোর মৃত্যু ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বিভ্রান্তি, পথভ্রষ্টটা এবং অস্থিরতাই তাদেরকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে দেয়নি। রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেদেরকে ব্যর্থ করেছে, অথচ তাদের যোগ্যতা ছিল। কিছু বাস্তবতার কারণে এবং নিজেদের কারণে তারা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারেনি। এরকম কয়েকজন রাজনীতিবিদকে আমরা এখন দেখে নেই।
সোহেল তাজ
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন, সেখানে শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদের সন্তান সোহেল তাজকে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় তাকে দায়িত্ব প্রদান করাটাকে প্রত্যেক মানুষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল। সোহেল তাজ কেবল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিতে সম্ভবত সবচেয়ে মেধাবী মানুষ তাজউদ্দীন আহমেদের পুত্র হিসেবেই নয়, বরং সোহেল তাজ নিজেও একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন। তার কথাবার্তা, তার ইতিবাচক পদক্ষেপ মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু তার কি যেন কি হল! হঠাৎ করে তিনি পদত্যাগ করলেন। দেশের বাইরে চলে গেলেন। তার এই পদত্যাগ নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন রয়েছে। অনেকে মনে করেন একটা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন তাকে পারিবারিক চাপের কারণে আমেরিকায় চলে যেতে হয়েছিল। যেটিই হোক না কেন, এরপর সোহেল তাজের অস্থিরতা, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা, তার রাজনীতির শেষ সম্ভাবনাটুকুও আর রাখতে দেয়নি। একটি সম্ভাবনার মৃত্যু হয়েছে।
আমানুল্লাহ আমান
আমানুল্লাহ আমান ডাকসুর ভিপি ছিলেন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব স্থানীয় নেতা ছিলেন। এরপর তার রাজনীতিতে উত্থানটা ছিল একটি সহজ অঙ্ক। সেটি ছিল জোয়ারে শুধুমাত্র গা ঠিকঠাক মতো ভাসিয়ে দিতে পারলেই হল। রাজনীতিতে তার জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভাব ছিল শুধু কিছুটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু আমানুল্লাহ আমান সেটি করতে পারেননি। এর কারণ হল তার অর্থলিপ্সা, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ভ্রান্ত নীতি। আমানুল্লাহ আমান ২০০১ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিজেকে উজ্জ্বল করে মেলে ধরতে পারেননি। এরপর রাজনীতিতে তাকে আর তেমন সক্রিয় দেখা যায় না। বরং শুধুমাত্র গতানুগতিক রাজনীতির ধারায় তিনি নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন।
মাহি বি চৌধুরী
মাহি বি চৌধুরী ২০০১ সালে সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সে সময় মনে করা হতো মাহি হতে যাচ্ছেন বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু পিতার সঙ্গে তিনিও বিএনপি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তারা বিকল্পধারা নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এটি একটি কুটিরশিল্প ধরনের রাজনৈতিক দল। জাতীয় রাজনীতিতে অবদানহীন এই সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলটির মূল উদ্দেশ্য কী, পরে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যায়। সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে নানারকম ব্যবসাবাণিজ্য হাসিল করাই এই রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য। মাহি বি চৌধুরী রাজনীতিতে আছেন কি নেই, সেটিই এক বড় প্রশ্ন? তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার প্রচুর সম্ভাবনা ছিল। তিনি নিজেও মেধাবী। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটেছে।
গোলাম মাওলা রনি
গোলাম মাওলা রনি রাজনীতিতে ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন টকশো ও লেখালেখির মাধ্যমে জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো জনপ্রিয়তার ভার তিনি বহন করতে পারেননি। এরপর তিনি নিজেই বিভ্রান্তিতে জড়ান। নানারকম বিভ্রান্তি শেষে তিনি কখনো তিনি জামাতের প্রতি আকৃষ্ট হন। এখন তিনি বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে সপে দিয়েছেন। সম্ভাবনা জাগিয়েও তিনি নিজের অযোগ্যতা এবং অস্থিরতার কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে রাজনীতিতে তার সম্ভাবনার মৃত্যুটা নিজেই ঘটান।
এ রকম বাংলাদেশে আরও অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যারা মেধাবী, যারা সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও তারা টিকে থাকতে পারেননি। এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তারা নিজেরাই।
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।