নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ২৭ জুন, ২০২০
করোনা মোকাবেলায় সফল দেশ কোনগুলো? এই প্রশ্নের উত্তরে শুরুতেই চলে আসবে নিউজিল্যান্ড, চীন, ভিয়াতনাম, তাইওয়ানের মতো দেশগুলোর নাম। আর যারা আরেকটু বেশি খোঁজ খবর রাখেন তারা হয়তো এসব দেশের সঙ্গে ইরিত্রিয়া, ফিজি মন্টেনিগ্রোর কথাও বলবেন। আর বাংলাদেশ? এটা আমাদের কারোরই অজানা নয় যে, করোনা মোকাবেলায় সফল দেশের কাতারে কোনভাবেই এখন বাংলাদেশের নাম আসবে না। বরং করোনার সবচেয়ে সংকটময় দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা কি একটু ভেবে দেখছি যে কেন আমরা করোনাকে কুপোকাত করে সফল হতে পারছি না? নিউজিল্যান্ডকে করোনামুক্ত করায় আমরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডানকে নিয়ে মেতে উঠছি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কে বাহবা দিচ্ছি। অবশ্যই তাদের এই প্রশংসা, বন্দনা প্রাপ্য। কিন্তু আমরা কি একটু ভেবেছি যে, তাদের লড়াইটা কেমন ছিল আর আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লড়াইটা কেমন?
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রনায়করা। কারণ করোনা মোকাবেলায় নীতি নির্ধারণ, কর্মপরিকল্পনা সাজানো, বিপর্যয় সামাল দেওয়াসহ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে রাষ্ট্রনায়কদেরই ভাবতে হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এটা অবশ্যই কঠিন একটা লড়াই। কিন্তু কারও কারও জন্য এটা আরো বেশি কঠিন। যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজিল্যান্ডের জাসিন্ডা আর্ডার্ন, চীনের শি জিনপিং কিংবা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের চেয়ে শেখ হাসিনার যুদ্ধটা একেবারেই ভিন্ন। এর কারণ হলো-
জনসংখ্যা
একমাত্র চীন ছাড়া করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সফল হওয়া প্রায় সব দেশেরই জনসংখ্যা একেবারেই কম। নিউজিল্যান্ডের কথাই ধরা যাক। ৫০ লাখেরও অনেক কম। আর আয়তন বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। সুতরাং ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যেখানে আইন শৃংখলা বাহিনীকে মাঠে নামতে হচ্ছে, নিউজিল্যান্ড সেখানে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছে।
সচেতনতা
করোনা যুদ্ধে সফল হওয়া প্রায় সব দেশেই শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। তার চেয়েও বড় কথা হলো, সেখানকার মানুষ অনেক সচেতন। সেই দেশগুলোর সরকার করোনা মোকাবেলায় যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে তারা। আর আমাদের দেশে খোদ প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, আপনারা মাস্ক পড়ুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। কিন্তু তারপরও আমরা রাস্তায় বের হলেই দেখতে পাচ্ছি বহু মানুষ মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। আর সামাজিক দূরত্ব মানার তো কোনো বালাইই নেই।
আগ্রাসী নীতি
আমরা যদি চীনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, করোনা সংক্রমণের শুরুতেই তারা আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছিল। মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করেছিল তারা। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট চীনের মতো নয়। চীন অনেকটা একনায়কতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু আমাদের দেশ তা নয়। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই এমন যে জনগণের ব্যাপারে সরকারকে সবসময়ই নমনীয় থাকতে হয়। জনগণের উপর কঠোর হওয়া আমাদের দেশের সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
একলা চলো
অন্য দেশগুলোতে যেখানে সবাই সবার সাধ্যমতো করোনা মোকাবেলায় যা কিছু করা দরকার সব করছেন, আমাদের দেশে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই লড়ে যাচ্ছেন। পর্যবেক্ষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে ঘিরে রয়েছেন প্রধানত তিন ধরনের মানুষ। এর মধ্যে একটি অংশ হলো, যারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর তোষামোদেই ব্যস্ত থাকছেন। কোনো ইতিবাচক তথ্য বা ফলপ্রসূ পরামর্শ তারা প্রধানমন্ত্রীকে দিচ্ছেন না। আরেকটা অংশ আছেন, যারা হয়তোবা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমস্ত তথ্য গোপন রাখতে চাইছেন। তাছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে যারা আছেন, তারা অধিকাংশই যে যার কাজ যথাযথভাবে পালন করছেন না। আর তৃতীয় শ্রেনী, যারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু প্রথম দুই শ্রেনীর জন্য তাদের চেষ্টার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা একাই গুটিকয়েককে নিয়ে করোনা যুদ্ধটা লড়তে হচ্ছে। অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রনায়কদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটছে না বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
দুর্নীতির মেলা
এই করোনাকালেও আমাদের দেশে অন্য সময়ের মতোই দুর্নীতির উৎসব চলছে। প্রধানমন্ত্রী প্রনোদনা ঘোষণা করছেন। ত্রাণ বরাদ্দ করছেন। সেখানেও চলছে দুর্নীতি অনিয়ম। স্বাস্থ্য খাত থেকে বের হয়ে আসছে একের পর এক দুর্নীতির ফিরিস্তি।
অর্থনীতি
করোনা মোকাবেলায় সফল দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাটা আকাশ পাতাল পার্থক্য। শি জিনপিং যখন চীনকে লকডাউন করলেন, তখন তাকে ভাবতে হয়নি যে, তার দেশে কেউ না খেয়ে দুর্ভিক্ষে মরবে কিনা। ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশ নিউজিল্যান্ডকে জনগণের জীবিকা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা একেবারেই সেই দেশগুলোর মতো নয়। আমাদের দেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোপুরি লকডাউন হলে হাজার হাজার মানুষ হয়তোবা না খেয়ে মরবে। এত বিপুল জনগোষ্ঠীকে পুরোটা সময়জুড়ে ত্রাণ দিয়ে যাওয়া যতটা কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন হলো দুর্নীতিবাজ, চোর, জোচ্চোরদের এই ত্রাণ কর্মসূচী থেকে দূরে রাখা।
এজন্যই পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, শেখ হাসিনার জন্য করোনার লড়াইটা অন্যদের চেয়ে শত সহস্রগুণ বেশি কঠিন। কারণ অন্যদের যুদ্ধক্ষেত্রটা যেমন কিছুটা হলেও গোলাপ বিছানো, শেখ হাসিনার যুদ্ধের ময়দান সেখানে কাঁটায় পরিপূর্ণ।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।