নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০২ জুলাই, ২০২০
করোনা মোকাবেলায় সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি নিউজিল্যান্ড। করোনা সংক্রমণ তাঁরা রোধ করেছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এর মধ্যেই আবার নতুন করে খবর হলো, সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্ক পদত্যাগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে অনেক আগেই। যখন করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সেখানে লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী লকডাউন ভেঙে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এটা নিয়ে নিউজিল্যান্ডে তীব্র সমালচনা হয় এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন তখন বলেছিলেন যে, যদি এটা সঙ্কটকাল না হতো তাহলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। তখন তাঁকে পদোবনতি দেওয়া হয় এবং করোনা সঙ্কটের পর আজ ডেভিড ক্লার্ক পদত্যাগ করেছেন এবং বলেছেন যে, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যা কিছু ঘটেছে তাঁর সবকিছুর দায়দায়িত্ব তাঁর।
এই ঘটনাটি একটি দৃষ্টান্ত। এরকম বহু দৃষ্টান্ত বিশ্ব রাজনীতিতে প্রায় হরহামেশাই দেখা যায়। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বা কোন রকমের অক্ষমতা থাকলে তিনি সরে দাঁড়ান। কিন্তু বাংলাদেশে একজন মন্ত্রী দায়িত্ব পেলে তিনি কিছুতেই সরতে চাননা, এমনকি রদবদল করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলে তিনি মন খারাপ করেন এবং রাজনীতিকে অনেক সময় চিরবিদায় জানিয়ে দেন। কখনো কখনো মন্ত্রিত্ব হারিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচকও হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মন্ত্রীকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এমন নজির নেই বললেই চলে। একমাত্র ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপির আমলে জহির খান শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সার কেলেঙ্কারির বোঝা কাঁধে নিয়ে নিজে পদত্যাগ করেছিলেন। অবশ্য নিজে পদত্যাগ করেছিলেন নাকি জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট বিতর্ক রয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ব্যক্তিগত পাসপোর্ট নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন। এর প্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে মন্ত্রিসভায় যারাই পদত্যাগ করেছেন বা সরে গেছেন তাঁদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে বলে তাঁরা সরে গেছেন।
একজন মন্ত্রী যখন দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, ব্যর্থ হন, অযোগ্যতার প্রমাণ দেন তখন তিনি নিজে থেকে কেন সরে যাননা? এই প্রশ্নটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় গবেষণার বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এর পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।
প্রথম কারণ হচ্ছে, মন্ত্রিত্বে অনেক সুবিধা আছে। বাংলাদেশে মন্ত্রিত্ব মানেই অনেক সুযোগসুবিধা। বৈধ-অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি লোভনীয় পদ হয়ে যায় মন্ত্রিত্ব। এই কারণে কেউ একবার মন্ত্রিত্ব পেলে আর ছাড়তে চাননা।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, মন্ত্রী হলে এলাকায় কদর বাড়ে। ভোট বা অন্যান্য প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে মন্ত্রিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য মন্ত্রিত্ব পেলে কেউ আর তা ছাড়তে চান না। মন্ত্রিত্ব পেয়ে অনেকে ফুলেফেঁপে ওঠে, মন্ত্রিত্ব অনেকের রত্নভাণ্ডার উন্মোচিত করে দেয়। ধনসম্পদে তাঁরা ফুলেফেঁপে ওঠে আর তাই এসব পদ তাঁরা ছাড়তে চাননা। বাস্তবতায় বাংলাদেশের মন্ত্রিত্ব একটি লোভনীয় জিনিস এবং কেউ মন্ত্রিত্ব পেলে শত চেষ্টা, তদবির করে হলেও তা রাখতে চান। মন্ত্রিত্ব ছাড়া আর নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া যেন একই বিষয়।
মন্ত্রিত্ব এতটাই লোভনীয় যে, তাঁদেরকে যদি জনগণ ব্যর্থ বলে, অযোগ্য বলে এবং সত্যি সত্যি তাঁরা যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন তারপরেও তাঁরা মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননা। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা ধরি, তিনি নিজেই বলছেন যে করোনা নিয়ে কি হচ্ছে আমার ধারণা নেই, গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হয়নি- তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন না কেন? তিনি তো নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লার্কের মতো পদত্যাগ করতে পারতেন। এরকম অজস্র মন্ত্রী আছেন যারা সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই চেয়ার ছাড়ছেন না। কাজেই অনেকে মনে করেন যে, যদি প্রশাসনে দূর্নীতি বন্ধ করা যায় এবং যদি মন্ত্রীদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় তাহলে মন্ত্রিত্বের প্রতি আগ্রহ কমবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে সংসদীয় কমিটিকে যদি জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় এবং নির্বাহী বিভাগকে যদি সবসময় একটা স্বচ্ছতার মধ্যে আনা যায় তাহলে মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে রাখার লোভ কমে যাবে, বরং মন্ত্রী হয়ে দেশের জন্য কিছু করার প্রবণতা বাড়বে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।