নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৮ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২০
করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এই লড়াইয়ে যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা। তিনি করোনা মোকাবেলার যে কর্মপন্থা নির্ধারণ করছেন, কর্মকৌশল নির্ধারণ করছেন মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁরা মনে করছেন যে, করোনা নিয়ে সরকারের ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, স্যাবোটাজ হচ্ছে এবং সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য নানামূখী কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেখা যায় যে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা মনে করছেন যে, এখনই সরকারকে সতর্ক হতে হবে নাহলে সামনে অনেক বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা, তৃণমূলের কর্মীরা যে পাঁচ ধরণের অব্যবস্থাপনা এবং ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন তাঁর মধ্যে রয়েছে-
১. প্রশাসনের ষড়যন্ত্র
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা জেঁকে বসেছে। আওয়ামী পন্থী এবং প্রভাবশালী আমলাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে কেলেঙ্কারি, বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ একজনের সচিব হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন পদে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের অধিষ্ঠিত হওয়াটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন যে, বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা এখন নতুন নীলনকশার পরিকল্পনা করছে। তাঁরা প্রশাসনের ভেতরে ঢুঁকে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কৌশল নিয়েছে এবং সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আসীন হচ্ছেন।
২. স্বাস্থ্যখাতে ষড়যন্ত্র
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে যে তাঁরা মনে করছেন স্বাস্থ্যখাতে পরিকল্পিতভাবে স্যাবোটাজ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আওয়ামী লীগের চিন্তাচেতনাকে ধারণ করেন না, তাঁরা নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে তাঁদের দায়িত্বে টিকে আছে এবং তাঁরা প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন যে, স্বাস্থ্যখাত যেভাবে কাজ করছে তা প্রকাশ্যই সরকারকে ডুবানোর জন্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সমালোচনা করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেই ঘটনাগুলো অযোগ্যতা নয়, স্যাবোটাজ এবং ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা।
৩. সিদ্ধান্তহীনতা
প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াত পন্থিদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে এখন সরকারের মাঝে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত অনেক বিষয়েই সরকার শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যাপক সমালোচনার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কি, লকডাউন নিয়েও দেখা যাচ্ছে একের পর এক সিদ্ধান্তহীনতা। এরকম সিদ্ধান্তহীনতা বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন যে, এটাও ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
৪. সঠিক তথ্য প্রাপ্তিতে বাঁধা
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সঠিক তথ্য জানতে দেওয়া হচ্ছেনা এবং তাঁর আশেপাশে যারা আছে তাঁরা প্রকৃত তথ্য গোপন করছে এবং করোনার কারণে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা শেখ হাসিনার তথ্য প্রাপ্তির মূল উৎস সেই নেতাকর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছেন না। ফলে অনেক তথ্যই তিনি সঠিকভাবে পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রাপ্তিতে বাঁধার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র, সেই ষড়যন্ত্র আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
৫. পরিকল্পিত অপপ্রচার
বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে এবং সরকার করোনা মোকাবেলা করতে পারছে না এধরনের একটি ধারণা জনগণের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পরিকল্পিত নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে। একটি জনপ্রিয় দৈনিক করোনার সময়ে বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির ছবি ছাপিয়েছে। যেটা অনৈতিক এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করা, ক্ষোভ ঘনীভূত করাই এই প্রচারণার মূল অংশ। অধিকাংশ মূল ধারার পত্রিকাই এখন সরকারের সমালোচনায় মুখর। অথচ সরকারের যে ইতিবাচক দিকগুলো সেগুলো কোথাও তুলে ধরা হচ্ছেনা। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যে, এই ঘরে-বাইরের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে খুব দ্রুত দরকার রাজনৈতিক উদ্যোগ।
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।