নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ০৮ জুলাই, ২০২০
করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যকে সংকটের মুখে ফেলেছে। এটা অবশ্যই ভয়ের কথা। কিন্তু করোনার বহু নেতিবাচক প্রভাবের ভিড়ে একটি ইতিবাচক দিক হলো এই ভাইরাস মানুষের প্রকৃত চেহারা চিনিয়ে দিচ্ছে। করোনা বলে দিচ্ছে যে কোন নেতা, কোন রাজনৈতিক দল জনগণের বন্ধু এবং কে বন্ধু নয়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে আমরা একটা অংশকে দেখি যারা সবসময় সরকারের সমালোচনা করেন। জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলে রাজনৈতিক দল গড়ে নানা সময় হম্বতম্বি করতেও দেখা যায় তাদের। কিন্তু মুখে বড় বড় কথা বলা ছাড়া জনগণের বিপদে হাত বাড়িয়ে দিতে তাদের দেখা যায় না বললেই চলে। করোনা সংকটের এই চার মাসে তথাকথিত এই জননেতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থপরতা এবং ভণ্ডামী আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে করোনা সঙ্কটের সময়ে এই ধরণের রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলো যেন কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছে, তাদের কোন খোঁজ নেই। জনতার পাশে তারা নেই। এক ছটাক চাল বা গম বা যেকোন ধরণের ত্রাণ নিয়ে তারা জনতার পাশে যাননি। দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াননি। এসব দল ও নেতাদেরই একটু চিনে নেওয়া যাক-
বিএনপি
বিএনপিকে আমরা সবসময় দেখি সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতে। সরকার জনগণের জন্য কী করলো না, কোথায় কি ভুল হলো তা নিয়েই মশগুল তারা। কিন্তু যদি বলা হয়, জনগণের জন্য তারা কী করেছে, তাহলে কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে যেখানে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি মারাও গেছেন। অথচ বিএনপির কোন শীর্ষ নেতা করোনায় আক্রান্ত হননি। বরং বিএনপির অন্যতম নেতা মোর্শেদ খান করোনায় সংক্রমণের পর পরই চার্টার্ড বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তারেক জিয়া লন্ডনে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। বেগম জিয়াও আছেন নিরাপদেই আছেন। একমাত্র বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভি কে পিপিই পড়ে দশ বারো জন মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরন করতে দেখা গিয়েছে এবং সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া বি এন পির আর কোন নেতাকে এখন পর্যন্ত কোন ত্রান সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়নি। করোনায় ঘরবন্দি থাকা তারা ভালো করেই মানছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে গ্লাভস, পিপিইসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম পড়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে গালাগালি ছাড়া অন্য কোন কিছুই করছেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ত্রান সহায়তা করেছেন, অসহায় মানুষকে সাহায্য দিয়েছেন এইরকম কোন খবর আমাদের কাছে নেই। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন করোনার শুরু থেকেই নিজেকে ঘর বন্দি রেখেছেন ঘর বন্ধি থেকেছেন মির্জা আব্বাস। তিনি মাঝে মাঝে টুকটাক বিবৃতি দিচ্ছেন। গয়েশর চন্দ্র রায়ের দেখা নেই।
বিকল্পধারা
বিকল্পধারাকে সবাই বাপ-বেটার দল হিসেবেই চেনে। করোনা সংকটের শুরু থেকেই বাপ বেটা অর্থাৎ ডা. বি. চৌধুরী এবং তার পুত্র মাহি বি. চৌধুরী উধাও হয়ে আছেন। ত্রাণ সাহায্য তো দূরের কথা কোনো জায়গাতেই তাদের দেখা মিলছে না।
গণফোরাম
এই দলটির নেতা এবং কর্মী বলতে গেলে একজনই। তিনি হলেন ড. কামাল হোসেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে ড. কামাল হোসেনের টিকিটিও কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি ঘর থেকে বের হচ্ছেন না এবং তার কোন বক্তব্য-বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তিনি বা তার দল কোথাও এক ছটাক চাল বিতরণ করেছে, এমন খবর এখন পর্যন্ত আমরা খুঁজে পাইনি।
জাসদ
জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রব সবসময় সরব থাকেন, জনগণের কথা বলেন। যদিও তার নিজের দলে জনগণ নেই। করোনা মোকাবেলার সময় আরেক দফায় প্রমাণিত হলো যে তিনি কয়েকদফা শুধু চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন। কিন্তু ত্রাণ নিয়ে তিনি দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কাউকে কিছু সাহায্য দিয়েছেন-এমন নজির আমরা দেখিনি।
নাগরিক ঐক্য
এই দলের সর্বেসর্বা মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি মাইক্রোফোন পেলে কথার ফুলঝুরি ছোঁটাতে পারেন চমৎকার। তার জনসমর্থন থাকুক বা না থাকুক, তিনি সবসময় আলোচনায় থাকেন। কারণ তিনি একজন বাকপটু। এই করোনার সময়েও তিনি কিছু সমালোচনা করেছেন সরকারের। কিন্তু তারপরে তিনি কোয়ারেন্টাইনে। এখন তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। এই সময়ের মাঝে তার যেমন কোন বক্তব্য আমরা পাইনি, তেমনি তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ নিয়ে কোথাও গেছেন, বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকা বগুড়ায় ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছেন- এরকম কোন ঘটনা বা নজির আমরা দেখিনি।
ওয়ার্কাস পার্টি
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট নিয়ে রাজনীতি করছে। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক ওয়ার্কাস পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। তিনি গত মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রিত্ব চলে যাবার পর একটু বেহুঁশ ছিলেন। তিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলে আবার থুক্কু বলে প্রত্যাহারও করেছেন। কিন্তু রাজনীতিতে তার সুবিধাবাদী চেহারা দিবালোকের মতো উন্মোচিত করে দিয়েছেন তিনি নিজেই। রাশেদ খান মেনন একজন জননেতা এবং তার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে তিনি ঢাকায় এখন নির্বাচন করছেন। তবে নির্বাচন করলে কী হবে? জনগণকে নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। করোনাকালে তিনি কোনোপ্রকার ত্রাণ সাহায্য করায় নেই বললেই চলে।
জাতীয় পার্টি
জাতীয় পার্টির নেতারা সবসময় নিজেদের সুযোগ সন্ধানেই ব্যস্ত থাকেন। জনগণকে নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা ভাবনা তাদের মধ্যে নেই। করোনা সঙ্কটেও জনগণের পাশে তাদের দেখা যায়নি।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।