নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১০ জুলাই, ২০২০
গতকাল দিবাগত রাতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত একনিষ্ঠ যোদ্ধা সাহারা খাতুন মৃত্যুবরণ করেছেন। সাহারা খাতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ত্যাগের এক অপরূপ উদাহরণ। যিনি এই রাজনীতিতে পেয়েছেন খুবই সামান্য এবং এই না পাওয়া নিয়ে তাঁর কোন বেদনা-হতাশা কখনো কেউ দেখেনি। বরং তিনি রাজনীতি করছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করছেন- এটাই বোধহয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি।
রাজনীতিতে তিনি বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত হয়েছেন, মনোনয়ন পাননি, মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কিছুই তাঁর রাজনীতি করার তৃপ্তি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেনি, কোনকিছুই তাঁকে হতাশ করতে পারেনি এবং কোনকিছুই তাঁকে তাঁর আদর্শ থেকে এক চুল সরাতে পারেনি। বরং বাংলাদেশের ভোগাবাদী রাজনীতির বিপরীতে সাহারা খাতুন ছিলেন একটি বড় উদাহরণ।
আমরা দেখেছি যে, সাহারা খাতুন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রথম মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মনোনয়নে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, বঞ্চিত হয়েছিলেন ২০০১ সালেও। তবে রাজপথের আন্দোলনে তিনি সবসময় ছিলেন প্রথম সারিতে। ১৯৯৪ সালের পর থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন এডভোকেট সাহারা খাতুন। তারপরেও তিনি মনোনয় পাননি এবং মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে তাঁর মাঝে কোন দুঃখ-বেদনাও কেউ দেখেনি। মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য তিনি দলকেও দোষারোপ করেননি, নেতৃত্বের সমালোচনাও করেননি। যা বর্তমান রাজনীতিতে দেখা যায়। না পেলেই দল খারাপ হয়ে যায়, নেতৃত্ব খারাপ হয়ে যায় এবং সরকারের সমালোচনায় মুখর হন নেতারা। কিন্তু এদিক থেকে এক অপরূপ ব্যতিক্রম ছিলেন সাহারা খাতুন।
আমাদের বর্তমান সময়ের রাজনীতি হচ্ছে ভোগবাদের রাজনীতি। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসছে, টাকা উড়িয়ে নির্বাচন করছেন, জয়লাভ করছেন, টাকা উড়িয়ে দল গড়ছেন, টাকা উড়িয়ে ক্যাডার বানাচ্ছেন এবং যে টাকা খরচ হচ্ছে তা একবার মন্ত্রী বা এমপি হয়ে সেই টাকা সুদে-আসলে তুলে নিচ্ছেন জনগণের পকেট কেটে। এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁদের বিত্তের বৈভব দেখে জনগণ চমকে উঠছে। এরকম রাজনীতির ভিড়ে সাহারা খাতুন এক বিরল ব্যতিক্রম। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়ে যখন নির্বাচিত হন সাহারা খাতুন তখন তাঁকে প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা ছিল আমাদের মূল ধারার মিডিয়ায়, যে মিডিয়া সবসময় সাহেদদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল, যে মিডিয়া সবসময় ভোগবাদী রাজনীতিবিদদের পুজো করে। ৬ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। এই সময় সাগর-রুনীর ঘটনা যেমন তাঁকে সামাল দিতে হয়েছে, তেমনি সামাল দিতে হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আজকের আলোচনা নয়, তবে এই সময়ে সাহারা খাতুনকে নিয়ে যত অপপ্রচার হয়েছে তত অপপ্রচার অন্য কোন মন্ত্রীকে নিয়ে হয়েছে কিনা জানা নেই। এই প্রেক্ষাপটে তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয় এবং ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত তিনি ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহারা খাতুনকে অনেকভাবে সমালোচিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মাঠের রাজনীতি করেন, তিনি মন্ত্রীত্বের জন্য উপযুক্ত নন, তিনি সভা-সমাবেশে ঘুমিয়ে পড়েন ইত্যাদি নানা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠলেও কেউ তাঁকে কখনো দুর্নীতিবাজ বলতে পারেনি, কেউ তাঁকে কখনো আদর্শ বিচ্যুত বলতে পারেনি। অথচ এখন যদি আমরা বর্তমান মন্ত্রিসভার দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখবো যে, এমন ভুড়ি ভুড়ি মন্ত্রী আছেন যারা অযোগ্য, ব্যর্থ, দায়িত্বহীন এবং দলের প্রতি কোন আদর্শ নেই এবং নীতি-আদর্শের দিক দিয়ে একেবারেই নিম্নমানের এবং তাঁরা তাঁদের নূন্যতম যোগ্যতার পরিচয় না দিয়ে বছরের পর বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁদেরকে নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছেনা, তাঁদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়েও দেওয়া হচ্ছেনা। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজনীতিকরনের একটি চর্চা চলছে। রাজনীতিবিদ যদি মন্ত্রী হন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা-অপপ্রচার করে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করার এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র সর্বত্র এবং এই ষড়যন্ত্রের মূল কুশীলভ হলো আমাদের বহুল প্রচারিত কিছু গণমাধ্যম। সাহারা খাতুন সেরকম কিছু অপপ্রচারের শিকার হয়েছিলেন। এই কারণে রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে তাঁকে খুব সহজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু অন্য যারা এখন সীমাহীন ব্যর্থতার বোঝা কাধে নিয়ে দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁদেরকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা। কাজেই রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যে কুৎসা অপপ্রচার তাঁর ভিকটিম প্রয়াত সাহারা খাতুন ছিলেন কিনা আজ আমাদেরকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।