নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ৩১ জুলাই, ২০২০
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ যেমন কিছু অনাকাঙ্খিত বাস্তব মোকাবিলায় ব্যস্ত হয়েছে তেমনি ক্ষমতাসীন দলের কিছু মন্ত্রী এমপিদের বালখিল্যতা এবং দায়িত্বহীনতায় মানুষ ক্রমশ বিরক্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা সঙ্কট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একদিকে যেমন করোনা সঙ্কট, তেমনি অর্থনৈতিক সঙ্কট, নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি- সব মিলিয়ে দেশের নাজুক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার কিছু মন্ত্রী এবং সরকারী কর্মকর্তাদের বালখিল্যতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ এবং পরিকল্পনাগুলো ব্যহত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় কিছু কিছু মন্ত্রীর তালিকাপ্রীতি দেখা যাচ্ছে। কথায় কথায় তারা তালিকা প্রণয়ন করছেন। আর এই তালিকা নিয়ে তৈরী হচ্ছে বিভ্রান্তি এবং কোন কারণ ছাড়াই সরকারের উদ্যোগ ও ভালো কাজগুলো আড়াল হয়ে যাচ্ছে। তালিকা নিয়ে যত বিতর্ক তৈরী হচ্ছে তত সমালোচিত হচ্ছে সরকার। এরকম তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন।
অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন
বাংলাদেশে যখন গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারের একটা টানাপোড়েন চলছে, মিডিয়াগুলো সরকারের ভালো কাজগুলো না দেখে শুধুমাত্র সমালোচনা করছে- সেই সময় মিডিয়াকে আস্থায় নিয়ে একটা পরিকল্পিত কর্ম পরিকল্পনা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি মিডিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। কিন্তু তখনই তথ্য মন্ত্রণালয় বিভাজন নীতি গ্রহণ করেছে। যে ৩৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তালিকা গত গভীর রাতে প্রকাশিত হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর এবং এতে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্যনির্ভর বহুল প্রচলিত অনলাইন পোর্টালগুলো এই তালিকায় না থাকা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরী হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, এখন এই তালিকার দরকার কি ছিলো? সবগুলো অনলাইন পোর্টালের আবেদন যাচাই বাছাই করে উপযুক্ত কমিটি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন নেওয়ার পর একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ না করে হঠাৎ করে কি এমন জরুরি পরিস্থিতি তৈরী হলো যে ৩৪ টি নাম প্রকাশ করতে হলো? কার এমন তাগাদা ছিলো যে তালিকা প্রকাশ করা জরুরি- এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। যে ৩৪ টি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেই নাম দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরণের হাস্যরস তৈরী হয়েছে। এই তালিকায় কিছু কিছু পোর্টাল আছে যেসবের নাম দেশের অনেক মানুষই এর আগে শোনেনি।
রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বিতর্ক
দ্বিতীয় আলোচিত তালিকাপ্রীতি এবং বিভ্রান্তির ঘটনা ঘটিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে বর্তমান মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের ঘোষণা দেন। গত বছর এরকম একটি তালিকা প্রকাশ করে তিনি চরম বিতর্কিত হন। বিতর্কিত এ তালিকায় এমন কিছু নাম ছিলো যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এই বিতর্কিত তালিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় তালিকা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। সাম্প্রতিক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি তালিকা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। এ তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে এই সময় হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে কেন এই তালিকা দিতে হবে? যখন পুরো দেশ অন্যরকম একটা সঙ্কটে, তখন তালিকা প্রণয়নের ফুরসত মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রী কিভাবে পান সেও এক প্রশ্ন বটে।
গৃহহীনদের তালিকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে, মুজিববর্ষে তিনি সব গৃহহীনদের গৃহ উপহার দিবেন। এজন্য প্রত্যেকটি জেলা থেকে তালিকা করা হয়। মজার ব্যাপার হলো যে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি তালিকা প্রণয়ন করেছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের। এই তালিকাটি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসে তখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই হতবাক হয়ে যান। গোপালগঞ্জে এত গৃহহীন মানুষ কিভাবে এলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই তালিকা বাদ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোাগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কেন এ ধরণের তালিকা তৈরী করেছিলো তা নিয়েও জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ত্রাণের তালিকা
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ত্রাণের তালিকা নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। এই ত্রাণের তালিকা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে স্বয়ং সরকার প্রধান এবং নীতিনির্ধারকরা এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। এ তালিকা নিয়ে পক্ষপাতিত্ব এবং এমন ব্যক্তিদের নাম ঢুকানো হয়েছে যারা আসলে যোগ্য নন- এমন নানা অভিযোগে ভরা তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি এখনো থামেনি।
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকা
গত ঈদে প্রধানমন্ত্রী একেবারে হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে আড়াই হাজার করে টাকা ৫০ লাখ পরিবারকে অর্থ সহায়তার কর্মসূচী ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই অনবদ্য এবং অসাধারণ উদ্যোগটি বিতর্কিত হয় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাপ্রীতি এবং তালিকা বিভ্রান্তির কারণে। এই তালিকা নিয়ে এমন সব সমালোচনা আসতে থাকে যাতে সরকার নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। দেখা যায় যে, একই মোবাইল নাম্বার থেকে অনেকজনকে এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। অনেককে এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিলো যারা আসলে ত্রাণ সহায়তায় উপযুক্ত নন। তীব্র সমালোচনার মুখে এই তালিকা সংশোধন করা হয় বটে কিন্তু সরকারের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, মন্ত্রীদের কেন এমন তালিকাপ্রীতি এবং তাঁরা কেন তালিকা নিয়ে বিভ্রান্ত করে? মন্ত্রীদের কাজ খুবই সুনির্দিষ্ট। মন্ত্রীরা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারটি দেখবেন এবং মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনী অঙ্গীকারের আলোকে কাজ করার জন্য নেতৃত্ব দেবেন। তারা কি কারণে এরকম তালিকা বিভ্রান্তিতে পড়েন সেটি নিয়ে আসলেই একটি গবেষণা করা যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।