নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ৩১ জুলাই, ২০২০
করোনা সঙ্কটকালে সবচেয়ে আলোচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যতটা না আলোচিত তার থেকে বেশি সমালোচিত। অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। কেউ কেউ মনে করেন যে, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসের সবথেকে খারাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের একজন। অনেকেই মনে করেন যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতার কারণেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ স্মৃতি থেকে খুব সহজেই অতীতের অপকর্ম, দুর্বৃত্তায়নের গল্প উবে যায়। আর এজন্যেই আমরা হয়তো বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে খুব দায়িত্ববান আচরণ করতে পারছেন না তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, জাহিদ মালেক বাংলাদেশের সবথেকে খারাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নন। বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে তা নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত ২৯ জন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদেরকে সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলা যায়।
বাংলাদেশের সবথেকে সফলতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করা হয় তাজউদ্দিন আহমেদকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এই সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের যে চিকিৎসা কাঠামো সেই কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। অনেকেই মনে করেন যে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত, মুক্তিযুদ্ধের সময় এটা প্রথম বাস্তবায়ন করেছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তাঁর কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চিকিৎসা ক্যাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা বি.চৌধুরীকে। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকাবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা পরিকাঠামো নির্মাণ এবং চিকিৎসক-নার্সসহ একটি পূর্ণাজ্ঞ বিন্যাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে টিকা দান কর্মসূচী এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বিকশিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের তৃতীয় সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে, তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো বিকশিত হয়েছিল।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে অধ্যাপক ডা. এমএ মতিনকেও একজন সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় এবং তাঁর আমলে বাংলাদেশে যুগান্তকারী ওষুধ নীতি হয়েছিল, যা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত হয়েছিল। এছাড়া এম এ মতিন চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা কাঠামোকে যুগোপযুগীকরণ এবং সরকারী হাসপাতালে উন্নত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তালিকায় সালাহউদ্দিন ইউসুফের নামও আসে। যিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রথম দুই বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ এবং কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন।
তবে এই সাফল্যের ভিড়ে আমাদের ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের তালিকাটাও খুব ছোট নয়। বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় সাকা চৌধুরীকে। যিনি ১৯৮৬ সালের মে মাস থেকে ৮৮ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিলেন। এই সময়ে তিনি ডাক্তারদেরকে জেলে দেওয়া হবে, চিকিৎসা না দিলে তাঁদের পাকরাও করো ইত্যাদি ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং আপত্তিকর কথা বলে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছিলেন। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধের জন্যে প্রস্তাবও পেশ করেছিলেন। নানা কারণে ঘৃণিত, তিরস্কৃত সাকা চৌধুরীর সময়ে বিতর্কিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবথেকে অস্থির অবস্থা পাড় করেছে বলেও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মনে করা হয় চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বাণিজ্যকরণ, টেন্ডারবাজি এবং দুর্বৃত্তায়নের সূচণা করেন বলে অনেকে মনে করেন। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং এই সময়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে টেন্ডারবাজি, নানারকম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারীতা এবং বিএনপি দলীয় লোকদেরকে কাজ দেওয়া, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে অনিয়ম শুরু হয়। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির গুরু মনে করা হয় চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় নিকৃষ্টতম এবং সম্ভবত সবথেকে দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে ড্যাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র লুটপাট, দুর্নীতি শুরু করে। যেকোন নিয়োগ-পদায়নের ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া, চিকিৎসকদের পদোন্নতির জন্যে টাকা নেওয়া, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ লোপাট করা এবং যন্ত্রপাতি কেনার নামে হরিলুটের এক রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্ব ব্যাংক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আমলের পাঁচ বছরে যে টাকা দিয়েছিল তাঁর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকাই লোপাট করেছিলেন ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ড্যাবের নেতারা। কাজেই দুর্নীতির সূচণাকারী এবং বিকশিত করার ক্ষেত্রে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বাস্থ্যখাতে ‘অমর’ হয়ে থাকবেন। আরেকটি কারণে ড. খন্দকার মোশাররেফ হোসেন বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের অনত্যম। সেটি হলো তিনি এসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য যে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার, সেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে অপরিণামদর্শী এবং আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত।
এভি এমজি তোয়াব ১৯৭৫-৭৬ এ স্বল্প মেয়াদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি তেমন কিছুই করতে পারেননি। বরং তখন তাঁর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
এইসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনেক ব্যর্থ, কিন্তু নিকৃষ্টতম নন। অতীতে যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধ্বংস করেছিলেন, সেরকম পরিস্থিতিতে তিনি নেননি। তাঁর দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এই ভঙ্গুর অবস্থানে দাঁড়িয়ে সমালোচিত হলেও অনেক অর্জনের গর্বও আছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।