নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৩ পিএম, ০২ অগাস্ট, ২০২০
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গতকাল রাতে দেখা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ৯ জন নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে যে, তাঁরা দোতলার ড্রয়িং রুমে যান এবং সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেড় ঘন্টা ব্যাপী আলাপচারিতা করেন। পরে বেরিয়ে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমের কর্মীদের বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং একই সময়ে তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কথাও বলেছেন।
কিন্তু ঐ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ঐ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমশ নাজুক হচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন এবং সামনে কিছু একটা ঘটতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া এটাও বলেছেন যে, এখানে তো কোন কথা বলা যায় না, এখানে অনেকেই সরকারের এজেন্ট রয়েছে যারা এই ধরনের তথ্য ফাঁস করে দিবেন। উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত বিএনপি নেতারা গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফিরোজায় দেখা করেছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যরিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বয় চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল মাহমুদ টুকু। এদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেগম খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতি এবং সরকারের বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার ব্যাপারে আলোকপাত করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা বলেন যে, সরকার পরিস্থিতির সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সরকারের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন যে, সারাদেশে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, মানুষ এখন দুর্নীতিকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আওয়ামী লীগের মধ্যেও যে, মন্ত্রীদের নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত করেন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলোও তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে বেগম খালেদা জিয়া কথা খুবই কম বলেছেন, শুনেছেন বেশি। তবে তিনি বলেছেন যে, যে পরিস্থিতি চলছে সেই পরিস্থিতি বেশিদিন চলতে পারে না, সামনে বড় ধরণের পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেজন্যে দলের নেতাকর্মীদের চোখকান খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন যে, বন্যার্ত মানুষের পাশে যেন বিএনপি সবসময় থাকে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন