নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ পিএম, ০৩ অগাস্ট, ২০২০
ক্ষমতা গর্ভে জন্ম হয়েছিল বিএনপির। রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করার জন্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে লোক ভাগিয়ে একটি খিচুড়ি দল তৈরি করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়াতাবাদী দল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থেকে তাঁর ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্যই এই দলটি গঠন করেছিলেন। এই দলের সবচেয়ে বড় চরিত্র হচ্ছে সুবিধাবাদী চরিত্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে হালুয়া-রুটির লোভেই তাঁরা একসঙ্গে জড়ো হয়েছিল। বিএনপিকে যতটা রাজনৈতিক দল মনে করা হয়, তাঁর থেকে এটাকে একটা ক্লাব বা এসোসিয়েশন হিসেবে বেশি মনে করা হয়। রাজনৈতিক দলের চরিত্র এখন পর্যন্ত ধারণ করতে পারেনি দলটি। আর সে কারণেই এই দলে যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ তাঁরা বরাবরই উপেক্ষিত হন। এই উপেক্ষার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিএনপির প্রয়াত নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বিএনপির সংকটকালীন নেতা হিসেবে মনে করা হয়। ১৯৮২ সালে যখন সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় আসেন তখন খন্দকার দেলোয়ার হোসেন অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করেছিলেন। ১৯৯১ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রীত্ব পাননি, হয়েছিলেন চিফ হুইপ। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন কোণঠাসা বিএনপিকেও সংসদে গুছিয়ে রাখতে কাজ করেছিলেন বিএনপির এই আপাত পরীক্ষিত নেতা। খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সবচেয়ে জ্বলে উঠেছিলেন ওয়ান ইলেভেনের সময়। সে সময় তিনি প্রায় একাই বিএনপিকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং খালেদা জিয়ার পতাকাকে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এই খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপিতে সম্মান পাননি, বরং উপেক্ষিত হয়েছেন।
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন একা নন, বিএনপিতে এরকম বহু নেতা আছেন যারা কর্মঠ নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু বিএনপিতে যোগ্য মর্যাদা পাননা। যেমন রুহুল কবীর রিজভীর কথাই ধরা যাক। রুহুল কবীর রিজভী ওয়ান ইলেভেনের সময় যেমন বিএনপির পক্ষে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তেমনি ২০০৮ সালের পর থেকে বিএনপির সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ নেতা মনে করা হয় রুহুল কবীর রিজভীকে। তাঁর রাজনীতি নিয়ে হাস্যরস থাকতে পারে, কৌতুক থাকতে পারে, কিন্তু তিনি নিজের বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি। রুহুল কবীর রিজভী যে পরিমাণ পরিশ্রম দলের জন্য করেছেন সেই পরিমাণ মর্যাদা দলের থেকে পাননি। এখনো তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নন। অথচ যারা পার্ট টাইম রাজনীতি করেন, যাদের কোন কর্মসূচীতে দেখা যায়না, যারা দলের জন্যে কোন ত্যাগ স্বীকারও করেন না তাঁরা বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।
একই কথা বলা যায় চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমানের ক্ষেত্রেও। সব সঙ্কটে চট্টগ্রামকে আগলে রেখেছিলেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা। চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের মাঝে তিনিই বিএনপির প্রতীক। কিন্তু যে কারণেই হোক বিএনপির এই প্রবীণ নেতা দলের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাননি। এখন অনেকটা অবহেলা, অনাদরে পড়ে আছেন তিনি।
বিএনপির আরেক নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ওয়ান ইলেভেনের সময় যেমন কাজ করেছেন, তেমনি বর্তমান সময়ও যখন বিএনপি এলোমেলো তখন বিএনপিকে আগলে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু এই নেতাও যথাযথ সম্মান পাননি দলে। দলের নেতৃত্বে তিনি একরকম উপেক্ষিত প্রায়।
শামসুজ্জামান দুদুর ট্রাজেডির গল্প আরো পুরনো। তিনি ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। জালাল- নিরুকে যখন বহিস্কার করা হয় তখন শামসুজ্জামান দুদুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ছাত্রদলের। সেই সময় সকলে নিশ্চিত ছিলেন যে ডাকসু নির্বাচনে আসাদুজ্জামান রিপন জিএস এবং তিনি ভিপি পদে ছাত্রদল থেকে মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে খালেদা জিয়া দুদু- রিপনের বদলে মনোনয়ন দেন আমান- খোকনকে। সেই থেকে যে তার কপাল পুড়তে শুরু করলো, কখনোই তার এই কপালে জোড়া লাগেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্বে দেওয়ার পরও দুদু এখন কৃষক দলের নেতা ছাড়া আর কিছুই নন। দলের নীতি নির্ধারণে তার কোন জায়গাই নেই।
হাবিব উন নবী খান আরেকজন পরিশ্রমী, ত্যাগি নেতা। বিএনপি দু দফায় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও সোহেল কারাবরণ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন- কিন্তু দলের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করেননি। তারপরও দলে তার যে সম্মান বা মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিলো তা পাননি।
এই সমস্ত নেতাদের মতো অনেক নেতাই আছেন যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যাদের শ্রমে ঘামে বিএনপির মতো একটি ড্রয়িং রুম সর্বস্ব ক্লাব এখনো টিকে আছে, তারা দলে মর্যাদা পান না কেন? তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি আসলে একটি সুবিধাবাদীদের নিয়ে গড়া দল। সুবিধাবাদীরাই এখানে সবচেয়ে ভালো জায়গায় থাকে। যারা চাটুকর, তোষামোদকারী- তাদের জন্যই বিএনপির ভালো জায়গা। যারা এখানে সত্যিকারে রাজনীতি করতে চায়, হোক তা ভুল কিংবা বিভ্রান্তির রাজনীতি- তাদের জন্য বিএনপিতে খুব একটা হাত তালি নেই। সেটি প্রমাণ করে এই নেতাদের বিএনপিতে অপাংক্তেয় থাকার মধ্য দিয়ে।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।