নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০২০
টেকনাফের ঘটনার পর আলোচনায় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে যেমন দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠছে তেমনি সবথেকে বড় করে যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হলো যে, এই ধরণের অপরাধগুলো যারা ঘটাচ্ছে তাঁরা জামাত-শিবিরের রাজনীতি করে কীভাবে পুলিশে যোগদান করেছে? এবং পুলিশে এসে তাঁরা কিভাবে এই ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলো করছে? একাধিক সূত্রগুলো বলছে যে, এগুলো নিরেট একটি ক্রসফায়ার বা নিছক একটি অপরাধমূলক কাজ নয়, বরং এই অপরাধগুলো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত করার জন্যে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যে।
এটা ঠিক যে, পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নানারকম দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ছিল। তবে সেটা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা, ব্যক্তিগত লোভ এবং ব্যক্তি অপরাধ। কিন্তু এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেই ঘটনাগুলোর পেছনে পরিকল্পিত কোন ঘটনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফের অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের ঘটনার পর দেখা যাচ্ছে যে, কক্সবাজার-টেকনাফে যারা পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। ওসি প্রদীপ ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত পটিয়া কলেজ শিবিরের নেতা ছিলেন।এমনকি কক্সবাজারের এসপির বিরুদ্ধেও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। শুধু কক্সবাজার-টেকনাফ নয়, বংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৩-৪ বছর জামায়াত-শিবিরপন্থি পুলিশের লোকজন ভালো পদবী পেয়েছে এবং তাঁদেরকে তোষণ করা হয়েছে- এরকম অভিযোগ উঠেছে পুলিশের পক্ষ থেকেই।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ঢাকার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ জেলার এসপি, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের নেতা ছিলেন। সেসময় শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং হাজতী হিসেবে গ্রেপ্তার অবস্থায় অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা হয়। তিনি এখন ঢাকার কাছেই একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এসপির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলায় এসপির দায়িত্ব পালন করছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায় যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন। কলা অনুষদে ইসলামিক ছাত্রশিবিরের যুগ্ন আহ্বায়ক ছিলেন ২০০৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। ২১-১২-২০০৪ থেকে ১৬-০৬-২০০৫ তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছিলেন। অনুসন্ধানে এটাও জানা যায় যে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নেওয়ার পেছনে জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অনুরোধপত্র দিয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় একজন এসপি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা গেছে যে, তিনি মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিল-আলেম পাশ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি সাহিত্যে অনার্স-এমএ পাশ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন আবাসিক হলের ছাত্র ছিলেন। সেসময় তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে মেলামেশা করলেও দাখিল-আলিমের ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল।
এরকম অনেকগুলো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। যে তথ্যগুলোতে দেখা যায় যে, তাঁদের অতীত রাজনৈতিক জীবন জামাত-শিবির বা বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার পরেও তাঁদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তাঁরা এই ব্যাপারে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন পুলিশের সাবেক আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে। ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের আইজি হওয়ার পর নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং রাজনৈতিক বিবেচনা বা আদর্শ বিবেচনা নয়, কেবলমাত্র যোগ্যতার বিবেচনায় পুলিশে পদোন্নতি এবং পোস্টিং নীতি তিনি চালু করেছিলেন। আর এই ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বা জামাত-শিবির করা অনেক ব্যক্তি পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয় তখন বিএনপি-জামাত পরিকল্পিতভাবে পুলিশে অনুপ্রবেশে সক্রিয় হয় এবং পুলিশে তাঁদের যে সমস্ত একই চিন্তাভাবনার লোকজন আছে তাঁদেরকে একত্রিত করে। তাঁদের মাধ্যমেই বিভিন্ন অপকর্ম ঘটানোর যে নীলনকশা, সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।
পুলিশের একজন সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে, পুলিশের যোগ্যতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার রাষ্ট্র-সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং আদর্শিক অবস্থান। তা না হলে বিভক্ত রাজনীতির এই বাংলাদেশে একটি থানার একটি ওসি যেকোন ধরণের অঘটন ঘটাতে পারে। যার প্রমাণ টেকনাফ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।