নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে এখন নানা কথা-বার্তা হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, ‘দ্যা ইকোনমিস্ট’ পত্রিকায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশের পর, কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
রাহুল গান্ধী ওই টুইট বার্তায় বলেছেন যে, কংগ্রেস প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছে। আর মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ওই সম্পর্ক গুলোকে নষ্ট করছে। রাহুল গান্ধী এটিও বলেছেন যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকা, ভারতের জন্য বিপদজ্জনক। আর রাহুল গান্ধীর ওই টুইট বার্তার পর, ভারতের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়নের জন্য মোদী সরকারকেই দায়ী করেছেন।
আর এই অবস্থায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। এই সম্পর্কের টানাপোড়নের কারণ অন্বেষণ এবং কার দায়- এই নিয়ে নানা রকম মতামত ও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জয় শংকর বলেছেন, যে দুই দেশের সম্পর্ক ঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং দুই দেশের সম্পর্কে কোন টানাপোড়ন নেই। এগুলো গণমাধ্যম আবিষ্কার করছে এবং খুব শীঘ্রই তারা হতাশ হবে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকা আসা, দেড় বছরের রাষ্ট্রদূত রীভা গাঙ্গুলীর বদলে দোরাইস্বামীকে রাষ্ট্রদূত পদে নিযুক্ত করা এবং বাংলাদেশে পেঁয়াজ বন্ধের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক যে, ঠিক-ঠাক আগের মতনই- সে সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশের ওপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে- বলেও কোন কোন মহল থেকে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে, সিলেট বিমান বন্দরের কাজ না পাওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে নিরাপত্তা নজরদারির কাজ না পাওয়া এবং তিস্তায় ১০০ কোটি টাকায় চীনা অর্থায়নে জলাধার নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে, বলে কোন কোন মহল থেকে মনে হচ্ছে।
আর যারা সাউথ ব্লকের খবর রাখেন; তারা জানেন যে, ভারত সব সময় একটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, এক দল বা এক সরকার নীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা সব সময় একটা বিকল্প ঠিক করে রাখে এবং সমান্তরাল ভাবে সম্পর্ক করে। আর যখনই তাদের স্বার্থে আঘাত হানে, তখনই তারা বিকল্পের দিকে ঝুকে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তবতা হল যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিজেপি সরকারের সামনে কিছু নেই। যদিও ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রগাঢ় সম্পর্ক হল ভারতের কংগ্রেসের।
এই সম্পর্ক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বিশেষ করে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অভাবনীয় সহযোগিতা করেছে। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী ও তৎকালীন সরকারের অবদান অনস্বীকার্য। কংগ্রেস এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নীতি-আর্দশের দিক থেকে সামঞ্জস্য এবং মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
বিশেষ করে উদার গণতান্ত্রিক নীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের প্রতি নজর রাখার দিক থেকে দুটি দল রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় কাছাকাছি। সেদিক থেকে বিজেপি সরকারের সাথে আওয়ামী লীগের নীতিগত ও আদর্শিক ব্যবধান অনেক বেশি। বিজেপি একটি কট্টর মৌলবাদী এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল।
সাম্প্রতিক সময়ে মোদী সরকার আরও বেশি হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক হয়েছেন। অর্থনৈতিক কৌশলের দিক থেকেও বিজেপি ধনীক শ্রেণির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তার অবস্থান স্পষ্ট করে। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ভারতের সাথে সর্ম্পককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এর প্রধান কারণ ছিলো, বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। কারণ বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় স্পর্শকাতর ইস্যু হলো বিচ্ছিনতাবাদীদের তৎপরতা। শেখ হাসিনা’ই একমাত্র নেতা, যিনি এটি বন্ধ করতে পেরেছিলেন। এটি ভারতের সবচেয়ে স্বস্তির কারণ।
তাই ভারত যখন বাংলাদেশের বিকল্প বন্ধু খুঁজতে যায়, তখন তাকে প্রথম যে বিষয়টি দেখতে হয়, তা হলোঃ এমন একটি বিকল্প খুঁজে বের করা- যারা এই নীতিটি অব্যাহত রাখবে। ভারতের সাউথ ব্লক এবং থিংক ট্যাংকরা মনে করেন যে, বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে অস্বীকার করা এবং বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার যে দৃঢ় অবস্থান। সে অবস্থান বাংলাদেশে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের আছে কিনা- এ ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সন্দিহান। বিশেষ করে, শেখ হাসিনা যেভাবে দুই দেশের বিরোধ গুলোকে মেটান, সেই কাজটি অন্য রাজনৈতিক দল কিভাবে করবে- সেটিও তাদের কাছে বড় প্রশ্ন।
আর এ কারণেই ভারতের কাছে বাংলাদেশে অন্যকোন পছন্দ নেয়, অন্য কোন বিকল্প নেই। আর তাই সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটি একেবারে বিচ্ছিন ঘটনা বলেই মনে করছেন কূটনৈতিকরা। এটি ভারতের সাউথ ব্লকের চিরায়ত চাপ সৃষ্টির এক কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। দুই দেশের সর্ম্পকের যে মৌলিক জায়গা, সেই মৌলিক জায়গায় কোন পরিবর্তন হয়নি, বলেই মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।