ইনসাইড পলিটিক্স

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কালজয়ী নেতৃত্বঃ সারা বিশ্বের বিস্ময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০৪ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

২০২০ সালে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন যে, শুধু বাংলাদেশ নয়-আন্তর্জাতিক মহল তার প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। আন্তর্জাতিক মহল সব সময় মনে করে তিনি একজন যোগ্য নেতা, যিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার কারণেই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এখনও দেশে-বিদেশে প্রভাবশালী সকল মহল আস্থাশীল।
 
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের আপামর জনতার নেত্রী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকাবাহী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের সফল রাষ্ট্রনায়ক, মানবতার মা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। 
 
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাবা-মা, ভাই-ভাবীসহ সকলকে হারিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও দুঃসহ যন্ত্রণা ও কষ্ট নিয়ে গত চারটি দশক ‘জীবনজয়ের’ যুদ্ধ চালিয়ে বার বার মৃত্যুকে জয় করে জীবনের ৭৩ টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৭৪ এ পা দিলেন তিনি। দুর্জয় সাহস এবং অঙ্গীকারের দৃঢ়তা না থাকলে এ রকম সর্বস্ব হারিয়ে কারও পক্ষে অতি আপনজনের রক্তভেজা মাটিতে ফিরে আসা এবং পিতার অসমাপ্ত কর্তব্যভার কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
 
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব নিয়ে জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১-র ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। 
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণের ৩৬ বছরের ক্লান্তিহীন যাত্রাপথ কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। জেল-জুলুম-অত্যাচার, দীর্ঘ কারা নির্যাতন ভোগ অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও হয়রানি কোন কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলা করেই তিনি  অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন। অকুতোভয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এবং উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার মানদণ্ড পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪৩, আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইসওয়াটার কুপার হাউস (পিডাব্লিউসি) বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ, ২০৫০ সালে আরো পাঁচ ধাপ এগিয়ে আসবে ২৩ নম্বরে। বাংলাদেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ উল্লেখ করে বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার গত এপ্রিলে বলেছে, এশিয়ায় টাইগার বলতে এত দিন সবাই হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে বুঝত। এর বাইরেও এশিয়ায় একটি ইমার্জিং টাইগার রয়েছে, যেটি হলো বাংলাদেশ। গত জানুয়ারি মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স’-এ ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের টিভি টকশো’তে আলোচকরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ঐ দেশের সরকারকে বলেন, ‘পাকিস্থানকে বাংলাদেশের মত বানিয়ে দিন’।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে সব প্রতিকূলতাকে নিয়ন্ত্রণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করে শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সুবিশাল প্রকাশ ঘটান। একই সময়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বাঙ্গালী জাতির আবেগ জড়ানো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরব অর্জন করে। 
 
আমি দীর্ঘ সাত বছর মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত স্টাফ হিসাবে কর্মরত ছিলাম। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার ও তাঁর সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বর্ণাঢ্য সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত পরহেজগার মুসলিম নারী, সৃজনশীল লেখক, মমতাময়ী মা, কর্মীবান্ধব অভিভাবক। তিনি কখনও ফরজ রোজা তরক করেন না ও পাঞ্জেগানা নামাজ কাজা করেন না। তিনি নিয়মিত  ‘তাহাজ্জত নামাজ’ আদায় করেন। ফজর নামাজ আদায় করে তিনি নিয়মিত পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন। তবে তাঁর তেলওয়াতের বিশেষত্ব হলো, তিনি পবিত্র কোরআনে বর্নিত মহান আল্লাহর নির্দেশনা ‘আমল’ করার জন্য প্রতিটি আয়াত বাংলা অর্থসহ তেলাওয়াত করেন।
তাঁর সৃজনশীল লেখালেখি তাঁকে আরও অনন্য আসনে বসিয়েছে। অসাধারন ধৈর্য্য সহকারে অধ্যাপক শামসুল হুদা, অধ্যাপক শামসুজ্জামান ও বেবী মওদুদ আপার সহযোগীতা নিয়ে দীর্ঘদিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর লেখা ডাইরী থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুইটি প্রকাশ করে বাঙালি জাতিকে গৌরান্বিত করেছেন। সংগঠনের দুর্দিনে নিপীড়িত, নির্যাতিত, অসহায় নেতাকর্মীদের মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছেন। অভিভাবকের সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেছেন নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক জখম হওয়া সত্বেও নিজের চিকিৎসার কথা চিন্তা না করে, নিহতদের দাফন ও আহতদের সুচিকিৎসার জন্য তিনি ছিলেন খুবই উদগ্রীব। এছাড়া নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনের সাংসারিক ব্যয় মেটানোর জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠাতেও ভুল করেননি।
কেবল রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই তিনি অনন্য নন, তাঁর রয়েছে অসাধারণ মানবিক গুণাবলি। বিলাস-বাহুল্যবর্জিত সাধাসিধে জীবনযাত্রা এবং পোশাকেআশাকে তাঁর অতুলনীয় বাঙালিয়ানা তাঁকে সাধারণ মানুষের ও দুঃখী মানুষের প্রিয় নেতা হিসেবে অসামান্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে বসিয়েছে।
 
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ জনসমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শক্ত হাতে বাংলাদেশের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খান। অসীম সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে নারকীয় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশকে টেনে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলতে থাকে তাঁর প্রাণপণ চেষ্টা। খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশ থেকে ‘মঙ্গা ও লোডশেডিং’ দূর করে দেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ঘরে ঘরে চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়।
 
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তা প্রসূত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষনা দিয়ে আধুনিক বিশ্বের ন্যায় ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি সুবিধা’র স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলার মানুষকে। দুরদৃষ্টসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক (Visionary Stateman) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়-এক মোহনীয় বাস্তব। বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ আজ ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধাভোগী।
 
শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ২০১৫ সালের ৭ মে  বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তির মধ্য দিয়ে  বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়  ছিল আরও একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তির শত বাধার মুখে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা নদীর বুকে পাঁচ কিঃমিঃ অধিক দীর্ঘ পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। এ অনন্য অর্জনের সময়ই হোলি আর্টিজানের মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার পর বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যখন বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন তখন তিনি এ মানবতার শত্রুদের দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেন। 
 
মায়ানমারে নির্যাতিত ও বিতারিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যায় মানবিক ও রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভুমিকা রেখেছেন। গণহত্যার শিকার মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন এক মানবতাবাদী দেশ হিসেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি গোটা বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছেন। বর্তমানে বিশ্বনেতাদের আলোচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। গার্ডিয়ান পত্রিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, তা বিরল। তিনি যে একজন হৃদয়বান রাষ্ট্রনায়ক, তা তিনি আগেও প্রমাণ করেছেন, এবারও প্রমাণ করলেন।’বিশ্ব কূটনীতিতে, এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকটে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার দেশের ১৬ কোটি মানুষ খেতে পারলে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসনমানও খেতে পারবে’। এই বলে রোহিঙ্গাদের তিনি মায়ের মত নিচের আঁচলে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই কারনেই  ব্রিটিশ মিডিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা খালিজ টাইমস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই মানবতা বিরোধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, বিচারের রায় কার্যকর হয়ে দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
তাঁর শাসনামলেই সমুদ্রসীমা জয় করেছে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ভৌগোলিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আদায়ে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন শেখ হাসিনা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য বিষয়ক ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সবার ওপরে স্থান পেয়েছে। এই চারটি ক্ষেত্র হলো—ছেলে ও মেয়েশিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি, মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়েদের সমতা, নারী সরকারপ্রধান হিসেবে দীর্ঘ সময় অবস্থান এবং জন্মের সময় ছেলে ও মেয়েশিশুর সংখ্যাগত সমতা। আর নারী-পুরুষের সমতার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশের ওপরে স্থান দিয়েছে বাংলাদেশকে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। লেবার পার্টির সিনিয়র এমপি জিম ফিটজপ্যাট্রিকস বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল।’
 
শুধুমাত্র নারী নেতা এই জন্য নয় বরং প্রান্তিক, দরিদ্র ও বিপর্যস্ত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি যেন আবির্ভূত হয়েছেন।
জার্মানির আঙ্গেলা মের্কেল বা নিউজিল্যান্ডের জাসিন্ডা আরডার্ন বিশ্বে প্রশংসিত নেতা। কিন্তু ধনী ওই দেশগুলোর জনসংখ্যা এতো কম যে, ওই দেশগুলোকে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য এতো বেগ পেতে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশকে একটি ছোট ও জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যেভাবে তাকে এগিয়ে নিচ্ছেন, যেভাবে সংকট মোকাবেলা করছেন তাতে তিনি বিশ্বে  নেতৃত্বে রোল মডেল  হয়ে গেছেন।
 
সারাবিশ্বে চলমান করোনা সংকটকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫ তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে, করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাবে। সব দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময়মতো এবং একই সঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসংঘের অধিবেশনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত, তিনি কয়েকটি মৌলিক বিষয় সামনে এনেছেন।
প্রথমত, ভ্যাকসিন বৈষম্য যেন না হয়, সে ব্যাপারে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিন যেন আসে এবং সেই ভ্যাকসিন যেন প্রান্তিক এবং দরিদ্র জন গোষ্ঠী যেন পায়- তা নিশ্চিত করার কথা তিনি বলেছেন। যেটি বিশ্বে প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে তিনি উচ্চারণ করেছেন।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা জলবায়ু মোকাবিলার জন্য আরও গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহবান জানিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞরাই  বলছেন ‘করোনা হলো প্রকৃতির প্রতিশোধ’। আমরা যে প্রকৃতির উপর অত্যাচার-অবিচার করেছি তার প্রতিশোধ। এই বাস্তবতায় শেখ হাসিনা যখন জলবায়ু প্রসঙ্গটি সামনে এনেছেন, তখন তিনি যেন বিশ্ব বিবেকের কন্ঠস্বর হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন।এভাবেই বাংলাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে যান মমতাময়ী এবং মানবকল্যাণে ব্রতী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের দুইশতাধিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশের গৃহিত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লেখা হয়েছে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোন নতুন ঘটনা নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায়ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া  দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবেলা তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। তার এই তড়িৎ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম’ বিষয়টিকে `প্রশংসনীয়` বলে উল্লেখ করেছে। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সুউচ্চ মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছে। সারা বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতারা তাঁর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। নেতৃত্ব গুণে ও সততায়  তিনি আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। দুর্দমনীয় অসীম সাহস, বাস্তব কৌশল ও পরিকল্পনা দ্বারা করোনা মোকাবেলা করে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ডব্লিউএফপি অনুমান করে বলেছে, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে, ফলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। কৃষির ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় ডব্লিউএফপিএর ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমাণিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করেছেন, ‘করোনা ও বন্যা যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকট হবে না’। তাঁর কথাই এ পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। 
 
অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার ১৯৯৭ সালে যুগান্তকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, স্থলমাইনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীকে সহায়তা ও নারীকল্যাণ, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাসহ অনেক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।’ অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, মেধা, বিচক্ষণতা, আত্মপ্রত্যয় ও দূরদর্শিতার কারণে তিনি এখন বিশ্ব নেত্রী। 
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আব্দুল গফফার চৌধুরী এক প্রকাশনায় লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, হাসিনার শাসনামল একদিন অতীতের হোসেনশাহী শাসনামলের মতো বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে সংযুক্ত হবে।’। সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেনের মতে, ‘শেখ হাসিনা একই সঙ্গে বজ্রের মতো কঠিন-কঠোর ও ফুলের মতো কোমল নেত্রী। তিনি পিতৃ-মাতৃহীন শিশু, বঞ্চিত শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে যেমন কেঁদে আকুল হন, তেমনি মানবতাবিরোধী গণহত্যাকারীরা, তার চেনা মানুষ হলেও, তারা যখন তাদের কৃত-অপরাধের জন্য যোগ্য শাস্তি পায়, তখন তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে তা অনুমোদন করেন ‘। 
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেছে। কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী মেরী ক্লদ বিবেউ বলেছেন, শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ।
২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসে ম্যানুয়েল সান্তোস শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আরেক নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান শেখ হাসিনাকে অভিহিত করেন ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’ হিসাবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘বাবার মতোই বিশাল হৃদয় তাঁর।’ ইন্ডিয়া টুডে তাদের দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে লেখে, ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চেয়েও বিশাল, যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’
ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নভেম্বর ২০১৭ সালে বিশ্ববিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন জরিপে বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩০তম অবস্থানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স এর সর্বশেষ গবেষণায় বিশ্বসেরা পাঁচজন কর্মঠ এবং পরিশ্রমী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছেন তা এক অসম্ভব সাফল্য, যা অনেক শাসকের কাছেই অকল্পনীয় ও ঈর্ষণীয়। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এখন চমক। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বকে এগিয়ে নেয়ার আন্তর্জাতিক মঞ্চে শেখ হাসিনার পরামর্শও এখন গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয়। তিনি আজ জাতিসংঘ তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি ও ন্যায়ের এক মূর্তপ্রতীক। তিনি শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, বিশ্বের অন্যতম প্রধাননেতা হিসেবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে। ত্যাগে, দয়ায়, ক্ষমায় ও সাহসের মহিমায় শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের বিস্ময়। শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগেরই নেতা নন, তিনি আজ দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে  রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন।
 
৭৪ তম জন্মদিন উপলক্ষে পাঠানো বিশেষ বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।
৭৪ বছরে পদার্পণের এই শুভ জন্মদিনে পরমকরুনাময় আল্লাহতাআলার নিকট আমাদের প্রার্থনা, সংগ্রাম সাফল্য আর বর্ণাঢ্য জীবনের জীবন্ত কিংবদন্তি জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
বাঙালি জাতিকে আরও দীর্ঘদিন উন্নত, সমৃদ্ধ জীবন গড়ার কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিন, সুস্থ থাকুন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার বিদেশে চিকিৎসা: পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

এর আগে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে কয়েকজন চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তারা একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করেছিলেন। এবার অবশ্য বিএনপির নেতারা সে পথে হাঁটছে না। বরং তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়াই উত্তম এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুরোধ বা দাবিটি আবার সামনে চলে আসছে। 

তবে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার ভাই বোনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়াই আসল কৌশল। সরকারের ওপর যদি চাপ সৃষ্টি করা যায় তাহলে সরকার শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই চাপের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সঠিক ভাবে জানানো এবং আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার জন্য তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে যদি বিদেশ না নেওয়া যায় তাহলে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। আর এ কারণেই তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটাকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। আর এ ক্ষেত্রে যে কোন শর্তে বেগম জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

শামীম ইস্কান্দার নিজে এবং কয়েকদফা সরকারের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং যে কোনো শর্তে তিনি তার বোনকে বিদেশ নিয়ে যেতে চান চান বলেও আশ্বস্ত করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য যদি সরকারকে অনুমতি দেওয়া হয় তা হলে সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে হবে। এ নিয়ে শামীম ইস্কান্দার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গেও দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। আজ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো এক সময় দেখা করতে যেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

বেগম খালেদা জিয়া এখন আগের অবস্থানে নেই। তিনি যে কোন প্রকারে বিদেশ যেতে চান। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, রাজনীতিতে তার এখন কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি নিজেও মনে করেন যে, তার চিকিত্সাটাই উত্তম। তবে এটি আসলে কোন রাজনৈতিক কৌশল নাকি সত্যি সত্যি বেগম জিয়া অসুস্থ সেটি নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। 

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাতে তার এক থেকে দেড় বছর স্থিতিশীল থাকার কথা। আর বেগম খালেদা জিয়ার যে বয়স এবং তার যে অন্যান্য শারীরিক অবস্থা তাতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো পরিস্থিতি তার নাই। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার একটা বয়স লাগে। অন্যান্য রোগ শোক থেকেও মুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একাধিক রোগে আক্রান্ত। তার কিডনির অবস্থা ভালো না। তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। এ রকম পরিস্থিতিকে একজন রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি রাজনৈতিক বাহানা কি না সেটি নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে শামীম ইস্কান্দার সরকারের কাছে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তাতে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেটার জন্য তারা সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা সৌদি আরবে যেতে চান।

খালেদা জিয়া   এভারকেয়ার হাসপাতাল   বিএনপি   শামীম ইস্কান্দার   ডা. জাহিদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা শনিবার

প্রকাশ: ০৪:৪০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।


আওয়ামী লীগ   মনোনয়ন বোর্ড   সভাপতি   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

স্বজন বলতে স্ত্রী-সন্তানকে বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের

প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমি যেসব বক্তব্য রেখেছি, অনেকে ভেবেছিলেন আমি নিজেই নিজের নামে বলে বেড়াচ্ছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার নেত্রী নিজেই এই বিষয়ে খোলাসা করে বলেছেন। স্বজন বলতে প্রধানমন্ত্রী স্ত্রী-সন্তানকে বুঝিয়েছেন। 

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-‘সেখানে (উপজেলা নির্বাচনে) কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করা যাবে না।  প্রশাসনকে প্রভাবিত করা যাবে না। নির্বাচনকে প্রভাবিত করা যাবে না। সে কথা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) পরিষ্কারভাবে বলেছেন। তার (প্রধানমন্ত্রীর) গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা আমাদের পার্টির কার্যক্রম পরিচালনা করব এবং উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারেও আমাদের নেত্রীর গাইডলাইনস অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব পালন করব।’

উপজেলা নির্বাচনে নিজের ভাইয়ের প্রার্থী হওয়া নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এখানে আমার সমর্থনের প্রশ্নই উঠে না...স্বজনপ্রীতি আমি কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেব না। এটা আপনারা দেখবেন।

সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমার একজন স্বজনও উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না? আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পার্টির কারও এর সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই, নেতৃস্থানীয় কারও এর সঙ্গে কোনো সমর্থন নেই। আমার সমর্থনের তো প্রশ্নই উঠে না। শেষ পর্যন্ত সরে যাবে না, সেটাও বলা যায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে গাইডলাইন সেটা আমি মুখে বলব একটা, আর কাজে করব আরেকটা, এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি আমি কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেব না। এটা আপনারা বাস্তবে দেখবেন।’ 

এখনো অনেকের স্বজন প্রার্থী রয়ে গেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকে এরই মধ্যে প্রত্যাহার করা শুরু করেছেন। সামনে আরও সময় আছে। প্রত্যাহার করতে চাইলে নির্ধারিত সময়ের পরেও করা যায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় সরকার বাধা দিচ্ছে-বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক, আওয়ামী লীগ করেনি। সেই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার ও বন্দী হয়েছেন। বিএনপি নেতাদের অবহেলার জন্য, খালেদা জিয়ার আদালতের হাজিরা প্রলম্বিত করা, এক বছরের বিচার দশ বছরেও শেষ হয়নি-এটার জন্য বিএনপির নেতারা দায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনিসুর রহমান প্রমুখ।

ওবায়দুল কাদের   আওয়ামী লীগ   সাধারণ সম্পাদক   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এখন কাদের কাকে নির্দেশ অমান্যকারী বলবেন

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। 

গত বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে স্পষ্ট হয়েছে, যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে খুব একটা কিছু করা হবে না। আর ওবায়দুল কাদের যখন তার নির্দেশনা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদেরকে বাধ্য করতে পারছেন না ঠিক সেই সময়ে তিনি নিজেই একজন নির্দেশ লঙ্ঘনকারী হিসাবে আবির্ভূত হলেন।

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগ্নে। ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে। আর ভাগ্নে (আপন বোনের ছেলে) মাহবুব রশীদ মঞ্জু প্রার্থী হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।

গতকাল বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের তালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে শাহাদাত হোসেনের নাম রয়েছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদের তালিকায় মাহবুবুর রশিদের নাম রয়েছে তিন নম্বরে। মন্ত্রীর ছোট ভাই ছাড়াও এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আরও তিনজন প্রার্থী আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগের সাবেক আহবায়ক এবং ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ গোলাম শরিফ চৌধুরী, সাবেক উপজেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর আলী।

প্রশ্ন হল ওবায়দুল কাদের যখন বারবার বলছিলেন যে, মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না এবং এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তাহলে তিনি নিজে কেন এই অনুশাসন ভঙ্গ করলেন? তার আত্মীয় স্বজনদেরকে তিনি কেন প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে দিলেন? তিনি তো এখানে বাধা দিতে পারতেন। তিনি দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের নির্দেশনার বাহিরে একারণে তার ভাই এবং ভাগ্নেকে সর্তক করতে পারতেন। নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু সেটি তিনি করেননি। তার ফলে ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা খেলো হালকা এবং অকার্যকর হয়ে গেল বলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানছে না। এর প্রধান কারণ হল, আমরা যেই নির্দেশ দিচ্ছি সেই নির্দেশ আমরা নিজেরাই মানছিনা। আমরা যখন কোন নির্দেশনা মানিনা তখন তৃণমূলকে আমরা মানাবো কিভাবে। তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (স:) এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (স:) এর কাছে যখন এক মা গেয়েছিল তার সন্তানের অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করতে তখন মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (স:) তাকে কিছু বলেননি। এরপর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) নিজে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করেছিলেন। নিজে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে তারপরে ছেলেটিকে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যে কাজটি আপনি নিজে প্রতিপালন করেননা, সেই কাজের জন্য অন্যকে নির্দেশ দেওয়াটা হল এক ধরণের প্রতারণা। এটি সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারে। ওবায়দুল কাদের নিজেই যখন তার দুই আত্মীয়কে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তখন তিনি অন্যদের শাসন করবেন কিভাবে।

ওবায়দুল কাদের   আওয়ামী লীগ   সাধারণ সম্পাদক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৌশলী আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।

শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি

জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?

তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।

এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’

আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।

গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন, কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’

জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন। এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।

এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।

সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন। তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’

আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা

এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায় তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’


প্রভাবশালী নেতা   আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন