নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ০১ অক্টোবর, ২০২০
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু সেই কারণে তিনি আলোচিত নন। তিনি আলোচনায় আসেন স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিলো এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
ওই নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবে, তা নিয়ে তিন জোট আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত আট দলীয় জোট, বিএনপি নিয়ন্ত্রিত সাত দলীয় জোট এবং বামদের নিয়ে পাঁচ দলীয় জোট এক বৈঠকে বসে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হবে।
কিন্তু এখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সংবিধান। এর পর উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে টেলিফোন করেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেন নির্বাচনের পর সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদকে বৈধতা দেয়া হবে। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এ সময় শর্ত জুড়ে দেন। যদি তাকে আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। শেখ হাসিনা সেই শর্ত মেনে নেন।
এরপর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ‘৯১ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে বিএনপি জামাত জোট বিজয়ী হয়। এরপর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শাহাবুদ্দিনকে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থেকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এটি আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ অবসরে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। সেই সময় বিএনপি নিয়ুক্ত রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের বাসায় যান এবং তাকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার আহবান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদটিকে সমুন্নত রাখতে। দল নিরপেক্ষ একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করতে। কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই নানা রকম বির্তক শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান। বিভিন্ন মন্তব্য করা, বিভিন্ন বিল নিয়ে আপত্তি করার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেন।
যেহেতু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন প্রধান বিচারপতি ছিলেন, সেজন্য আওয়ামী লীগ আশা করেছিলো যে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারকে ত্বরানিত করা, হাইকোর্ট এবং আপীল বিভাগে যেন দ্রুত বিচারটি নিম্পত্তি হয়; সেজন্য বিচারপতি শাহাবুদ্দিন উদ্যোগ নেবেন।
কিন্তু সেই উদ্যোগ তিনি নেননি বরং তার কিছু কিছু বক্তব্য আওয়ামীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ২০০১ সালের জুলাই মাসে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন লতিফুর রহমান হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। রাষ্ট্রপতি থাকেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন অনুয়ায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা থাকে অনেক বেশি। আর সে সময় রাষ্ট্রপতি অনেক কিছু করতে পারেন।
কিন্তু বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালের নির্বাচনে যে ভূমিকা পালন করেছেন, সেটি সম্পূর্ণভাবেই বিএনপি জামাতের পক্ষে। এমনকি লতিফুর রহমানকে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ইত্যাদি সবই প্রশ্নবিদ্ধ। এরপর ২০০১ এর অক্টোবরের নির্বাচনে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের পাতানো ফাঁদেই পা দেয় আওয়ামী লীগ। একটি পরিকল্পিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েও পরাজিত হয় শোচনীয়ভাবে।
অনেকেই মনে করেন, ওই নির্বাচনের যে নাটক সে নাটকের অন্যতম কুশীলব ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সরকারের বিভিন্ন মহল একাট্টা হয়ে আওয়ামী লীগকে হারানোর এক নীলনকশা তৈরি করেছিল। যে নীল নকশার অন্যতম রুপকার ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বলে মনে করেন অনেকে। ওই নির্বাচনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন নেপথ্যে চলে যান এবং কোন রকম কর্মকান্ডেই তাকে আর দেখা যায় না। এখনও তিনি নিভূতে, নীরবে অবসর জীবন যাপন করছেন।
কিন্তু ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার বিতর্কিত ভূমিকার জন্য এখনও তিনি সমালোচিত। তার ভূমিকা কেন ওই রকম ছিলো- সেটিও একটি গবেষণার বিষয়।
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।