নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০২০
এখন এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে বিএনপির মহাসচিব পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কদিন আগেও মনে করা হচ্ছিলো যে একটি নতুন কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন মহাসচিব নিয়োগ করা হবে। কিন্তু লন্ডন থেকে তারেক জিয়া শুক্রবার যে ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছেন, তাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে খুব শিগগিরই একজন নতুন মহাসচিব দিতে যাচ্ছেন। এই নতুন মহাসচিব হবে চমক। তিনি কে হচ্ছেন নতুন মহাসচিব, সে সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত না করেই শুধু এইটুকু বলেছেন যে, একজন জনপ্রিয় তরুণ যার নাম আলোচোনায় নেই তাকে মহাসচিব করারা বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিতে মহাসচিব পরিবর্তনের গুঞ্জন চলছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই মহাসচিব হিসেবে সরে যেতে আগ্রহী ছিলেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের ব্যর্থতার জন্য মহাসচিবকে দায়ি করেছিলেন এবং এই মহাসচিব পরিবর্তনের জন্য প্রকাশ্যে একাধিক বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার সমাঝতার অভাবের কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ পর্যন্ত ঝুলে থাকেন। এর পর খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হওয়ার পরেও রাজনীতির বিষয়ে তিনি আর হস্তক্ষেপ করছেন না এক রকম নিরবতা পালন করছেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিষয়ে তিনি বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। এদিকে তারেক জিয়াও দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা ভাবনা থেকে দলকে গোছাতে চাইছেন বলে বিএনপির একাধিক নেতা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তারেক জিয়া এখন চাইছেন ২০২৩ সালকে সামনে রেখে সংগঠনকে গোছাতে। আর সে জন্যই তিনি মহাসচিব হিসেবে এমন একজন ব্যক্তিকে নিতে চাইছেন যিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ, কর্মঠ, জনপ্রিয় এবং দলের মধ্যে তার ইমেজ রয়েছে। আর এরকম ব্যক্তি কে হবেন সে সম্পর্কে কোন ইঙ্গিত করেননি। বিএনপির একাধিক সূত্র বলেছেন যে, বিএপির মহাসচিব পরিবর্তন- এ নিয়ে কোনো রকম আলোচনা বিতর্ক না থাকলেও মহাসচিব কিভাবে পরিবর্তন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ও বিতর্ক ছিলো। অনেকেই তারেক জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মহাসচিব পরিবর্তনটি অবশ্যই দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত, তাহলে সেটি শোভন এবং গণতান্ত্রিক হবে। কিন্তু এখন বর্তমান পরিস্থিতে তারেক জিয়া নিজেই খুব দ্রুত মহাসচিব পরিবর্তনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এর কারণ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, হঠাৎ করে দেশে দক্ষিণ পন্থী রাজনীতিগুলোর নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন কর্মর্সুচি দিচ্ছে। বিনপি এখন এসমস্ত দক্ষিণ পন্থী ইসলাম পছন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে চায়। জামাতের সঙ্গেও সম্পর্ক ঝালাই করতে চায় বিএনপি। আর এই দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল ও জামাতের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্পর্ক সবসময় খারাপ ছিল। সাবেক এই বাম পন্থী নেতা উগ্রবাদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উঠা বসায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না এবং আগ্রহী নন। বরং তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে শক্তি শালি করার পক্ষপাতি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দলের মধ্যে করা হয়, তিনি ভারত পন্থী। ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও বিএনপিতে চালু রয়েছে। এখন বিএনপি যে নতুন অবয়ব নিতে যাচ্ছে তাতে খুব স্পষ্ট করেই ভারত বিরোধী অবস্থান দেখা যাবে দলটির মধ্যে। যেটি ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে ভারত বিরোধিতা এবং ধর্মীয় অনুভূতির রাজনীতির মাধ্যমেই কিন্তু বিএনপি শক্তিশালি হতে পারে। আর এই দুই ক্ষেত্রেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবস্থান অন্যরকমের। এ কারনেই বিএনপির যে পরিবর্তিত রাজনীতিক রুপ সে রাজনৈতিক রুপের সাথে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানানসই নন । তাই নতুন মহাসচিবের কথা ভাবা হচ্ছে । তবে এখন পর্যন্ত নতুন মহাসচিব কে হতে পারেন যিনি জামাত এবং ইসলাম পছন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আস্থা ভাজন, গ্রহণযগ্য তরুণ এবং জনপ্রিয়তা উদ্ধার করতে পারেননি বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তবে তারেক জিয়া শ্রীঘ্রই যে নতুন মহাসচিব দিচ্ছেন তা তিনি তিনি তৃণমূলের নেতাদের কাছে খোলাশা করেছেন। তিনি তাদের কথা দিয়েছেন যে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। খুব শিগগরই তিনি নতুন মহা সচিব দিচ্ছেন। বিএনপির নতুন মহা সচিব কে হবেন সে জন্য হয়তো আমাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন