নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ২৪ জানুয়ারী, ২০২১
আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ। অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও কি একতরফা ভাবে জিতবে আওয়ামী লীগ? নাকি এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি? এরকম প্রশ্ন এখন চট্টলাবাসীর মুখে মুখে। এই নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।
যে কারণে জিততে পারেন রেজাউল:
১. রাজনীতিতে কোন কলঙ্ক নেই: ত্যাগী নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য এলাকাবাসীদের ভোট তার পক্ষে যেতে পারে।
২. মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী: প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আলাদা সম্মানের জায়গা আছে মহানগরীর ভোটারদের মধ্যে। সেই সম্মান ও আবেগ যেতে পারে রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে।
৩. আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনীতি: গত এক যুগে আওয়ামী লীগ সরকার চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে। জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
৪. শক্তিশালী সংগঠন: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। দলের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত উদ্যোগ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে জোয়ার আনতে পারে।
৫. কেন্দ্রীয় নেতাদের চট্টগ্রাম সফর: নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম সফর করেছেন। এটা দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং পূণ:শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে উৎসাহিত করেছে। এটি নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যে কারণে হারতে পারেন রেজাউল:
১. আ.জ.ম নাছিরের ভূমিকা: আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপক্ষ গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত। এই নির্বাচনে তার আসল ভূমিকার উপর নির্বাচনের ফলাফল অনেকখানি নির্ভরশীল। গোপনে তিনি যদি অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহলে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপর্যয় হতে পারে।
২. ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ বিভক্ত। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩১টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহীরা অনঢ়। এদের ভূমিকা এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রভাব ফেলবে।
৩. গোপন অন্তঃকলহ: কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোন্দল বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এই অন্ত:কলহ যদি গোপনে হয় তাহলে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে।
৪. জামাত ফ্যাক্টর: চট্টগ্রামের রাজনীতিতে জামাত সব সময় একটা ফ্যাক্টর। জামাত যদি একট্টা হয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষে অবস্থান নেয় তাহলে এই নির্বাচনে জয় রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
৫. বাবু নগরী এবং হেফাজত ফ্যাক্টর: চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসা ঘিরে হেফাজত এখন মহানগর রাজনীতিতেও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুনায়েদ বাবু নগরী হেফাজতের আমীর হবার পর চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান লক্ষণীয়। নির্বাচনে এর প্রভাব কি হয় তার উপর ফলাফল কিছুটা হলেও নির্ভরশীল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন