নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র কাদের মির্জার আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আজ বসুরহাটে কাদের মির্জার সাথে তার প্রতিপক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে এবং গত কয়েকদিন ধরেই বসুরহাটে এলাকায় কাদের মির্জা একরকম উত্তেজনা ছড়াচ্ছিলেন।
কাদের মির্জা এই ঘটনা সারাদেশে আওয়ামী লীগের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। উল্লেখ্য যে, বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা। তিনি কেবলমাত্র বসুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন না, বরং তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইও বটে। আর এজন্য তার বিতর্কিত কথাগুলো গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল।
এই সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও কাদের মির্জার ব্যাপারে তেমন কোনো কথাবার্তা প্রথমদিকে বলেননি। কাদের মির্জা নির্বাচিত হওয়ার পরেও যখন তিনি তার বিতর্কিত বক্তব্য অব্যাহত রাখেন, তখন ওবায়দুল কাদের তাকে এ সমস্ত কথাবার্তা বন্ধ করার জন্য বলেন। উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের পরে কাদের মির্জা আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করে কথাবার্তা বলা শুরু করেছিলেন। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে আগামীকালের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হতে পারেন কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগ মনে করছে, কাদের মির্জার এরকম আচরণের পিছনে বিএনপি-জামাতের ইন্ধন আছে। আওয়ামী লীগের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যেভাবে কথা বলছেন তা বিএনপি-জামাতের বক্তব্যের মত। কাজেই আওয়ামী লীগের কোন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এভাবে কথা বলতে পারেনা। আর এই সবকিছু নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা অভিযোগ করেছেন।
সর্বশেষ গত কয়েকদিনের ঘটনা এবং আজ আওয়ামী লীগের সহিংসতায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ভিতর দ্বন্দ্ব, অন্তঃকলহ এবং অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকানোর কথা বলে আসছিলেন। আর এই সহিংসতায় বর্তমান রাজনীতির বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই কাদের মির্জার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এই জন্য খুব শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
আরো পড়ুন: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম থেকে কাদের মির্জাকে অব্যাহতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন