নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
অবশেষে বহুল আলোচিত, বিতর্কিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। ভালো হতো যদি এই শূন্য ঘোষণাটি অনেক আগেই করা হতো। কারণ কুয়েতের একটি আদলতে দণ্ডিত হবার প্রায় একমাস পর জাতীয় সংসদ এই সিদ্ধান্ত নিলো। অবশ্য জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুয়েতের আদলতে যে রায় হয়েছে সেই রায়ের কপি সংগ্রহ, যাচাই-বাচাই, পর্যবেক্ষণ শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিলম্ব করা হয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কুয়েতে যখন পাপুলকে মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তখনই সরকারের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থা গ্রহণ দেখা যায়নি। তখন যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তাহলে সরকারের যেমন সুনাম হতো, তেমনি এভাবে দূর্বৃত্তায়ন করে যারা জাতীয় সংসদের মত পবিত্র পাদপীঠে পা রাখে তাদের বিরুদ্ধেও একটা সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। কিন্তু সেটি করা হয়নি।
দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই আসন শূন্যের মধ্যদিয়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তা হলো, কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে এমপি বানালো কারা? কীভাবে একজন মানব পাচারকারী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ এমপি হতে পারে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, পাপুলের এমপি হওয়ার পিছনে কাজ করেছে টাকা, টাকা এবং টাকা। লক্ষ্মীপুর-২ আসন মহাজোট জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে টাকা দিয়ে পাপুল সরিয়ে দেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল দাঁড়ান। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শুধু যে টাকা পেয়েছিলেন এমনটি নয়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারার অংশীদার হয়েছিলেন, এটি নিশ্চিত। জাতীয় পার্টির কোন কোন নেতা পাপুলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তার এমপি হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছেন, সেটি জানা প্রয়োজন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে যাওয়ার ফলে পাপুলের এমপি হওয়ার পথ সুগম হয়েছিল বটে কিন্তু পূর্ণতা পায়নি। বরং যখন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাকে সমর্থন জানায়, তখন পাপুলের এমপি হওয়ার পথটি সুনিশ্চিত হয়ে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, যিনি প্রধানমন্ত্রীরও একজন উপদেষ্টা তিনি পাপুলকে সমর্থন করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা যিনি এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্যও বটে, তিনি আওয়ামী লীগের ঐ উপদেষ্টার নির্দেশে পাপুলকে সমর্থন জানানোর জন্য লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছিলেন। আর এই চিঠি যদি না দেয়া হতো তাহলে পাপুলের কলঙ্কের ভাগ আওয়ামী লীগের ঘাড়ে এসে পড়তো না। সেই চিঠি দেয়ার কারণেই এখন পাপুলের যেই অপকর্মের দায় কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগের ওপর আসতো। শুধু এখানেই ঘটনার শেষ নয়। পাপুল এমপি হয়েই ক্ষান্ত হয়নি। টাকা দিয়ে তার স্ত্রীকেও এমপি করেছেন। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করছে। জাতি খুশী হবে যদি পাপুলের স্ত্রীকেও সংসদ সদস্যের (সংরক্ষিত নারী আসন) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। তাহলে জাতি পাপুলদের মত দুর্নীতিবাজদের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে। আর ভবিষ্যতে যেন পাপুলদের মত কেউ টাকা খরচ করে নিজে এবং তার স্ত্রীকে এমপি বানাতে না পারে সেই ব্যাপারেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।