নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৭ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে একটি কঠোর অবস্থানের চিন্তা ভাবনা চলছে বিএনপির মধ্যে। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলে দ্বিমত আছে, তবে এখন বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতারাই নির্বাচন বর্জনের পক্ষে। বিশেষ করে চারধাপে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনগুলোর পর বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করছেন আর নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ নির্বাচন তাদের ভাষায় একটি তামাশায় পরিণত হয়েছে।
আর একারণে এপ্রিল থেকে যে ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচন হচ্ছে সেই নির্বাচনগুলোতে তাদের আগ্রহ নেই। তবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন দুটি কারণে তারা নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছেন। প্রথমত নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন এই নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটছে না। পাশাপাশি এমনভাবে ভোট হচ্ছে যেখানে সরকারি দলের বিজয় সুনিশ্চিত। পাশাপাশি এই নেতা মনে করছেন যে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে এবং নেতারা টাকা খরচ করে নির্বাচনে দাঁড়াতে আগ্রহী নন। সেই পরিস্থিতি হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়ানোর মতো আগ্রহী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে মূল সমস্যা আসলে অন্যত্র। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঢাকা শহরেই বিএনপির সংগঠনের ঠিক ঠিকানা নেই, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি নেই এবং ঢাকা মহানগরীর যে দুটি কমিটি আছে সেই দুটি কমিটিও এক রকম অকার্যকর। সাম্প্রতিক সময়ে সাহারা খাতুনের আসনের উপ-নির্বাচনে দেখা গিয়েছে যে, বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সংগঠিত হয়ে যে প্রচারণা সেটি করতে পারে নি। এবং দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় দেখা গিয়েছে বিএনপির ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয়াটা ছিলো দুস্কর। কারণ কোনও কমিটি না থাকা, পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার কারণে এক রকম সাংগঠনিক স্থবিরতা চলছে বিএনপির মধ্যে।
আর ঢাকার যখন এই অবস্থা তখন সারাদেশের তৃণমূলের অবস্থা আরও নাজুক। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করা, মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটি বাতিল করে তরুণ এবং যারা কাজ করছে তাদেরকে সামনে না নিয়ে আসার কারণে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্যক্রমে এক ধরনের অচল অবস্থা তৈরি করছে। স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন সময় তৃণমূলকে সংগঠিত করা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপরে গুরুত্ব দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে কিছু কর্মসূচির মাধ্যমেই তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে চান। আর এ কারণেই স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির সংগঠন এখন নেই বললেই চলে।
ইউনিয়ন পরিষদ হলো এক প্রকারে সব থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের সংগঠন। ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ এলাকায় বিএনপির কোনও কার্যক্রম নেই এবং কোনও কমিটিও নেই। আর যে কারণেই বিএনপি এখন এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চাইছে। তারা একদিকে বলতে চাচ্ছে যে, নির্বাচনের পরিবেশ নেই, নির্বাচনে ভোটারদের মতামতের প্রতিফল হয় না। কিন্তু আসলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য যে প্রার্থী দরকার বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের মতো তৃণমূলে সেই প্রার্থী সংকটে ভুগতে থাকার কারণেই বিএনপি হয়ত শেষ পর্যন্ত নাটকীয়ভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যে, তারা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করবে।
বিএনপির অন্যতম নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে, নির্বাচন বর্জনের দাবি আমার দীর্ঘ দিনের পুরোনো। এবং এখন এই নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে সকলের বোধদয় ঘটেছে। এখন তারা মনে করছেন যে নির্বাচন অংশগ্রহণ করা সমীচীন হবে না। তিনি মনে করেন বিএনপি খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবে। তবে এরকম বর্জনের ঘোষণা বিএনপির জন্য এটিই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরও বিএনপি বলেছিল এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনও নির্বাচনে যাবে না। তাবে তারা সেই অবস্থা থেকে সরে এসেছে। এখন এরকম ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত এই ঘোষণা কতদিন বিএনপি রাখবে সেটি হলো দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।