নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৮ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে যেমন ছিল দেশি-বিদেশী চক্রান্ত, সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চবিলাসী বিপদ্গামী কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল, তেমনি ছিল আওয়ামী লীগের ভিতরের ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগের ভিতরে খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমানের মত কিছু দুর্বৃত্ত এই হত্যাকাণ্ডে মদদ দিয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর পা মাড়িয়ে যারা গণভবনে যেয়ে শপথ নিয়েছিলেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাই ছিলেন। খন্দকার মোশতাকের যে মন্ত্রীসভা, সেই মন্ত্রীসভায় যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন তারা প্রায় সবাই ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগে সবসময় বলা হয় যে, আওয়ামী লীগে ক্ষতি হয় ভিতর থেকে। বাইরের লোক আওয়ামী লীগের যতটা না ক্ষতি করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে করে আওয়ামী লীগের ভিতরের ষড়যন্ত্রকারীরা।
শুধু ৭৫ নয়, বিভিন্ন সময় সংকটে দেখা গেছে যে, ভিতর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ৯১ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনের পরাজয়ের অন্যতম কারণ মনে করা হয় আওয়ামী লীগের ভিতরের ষড়যন্ত্র, কলহ এবং কোন্দল। ২০০১ সালে নির্বাচনী বিপর্যয়ের সময় দেখা গেছে আওয়ামী লীগের ভিতরের একটি শক্তি গোপনে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। তাদের কারণেই ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছিল। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমরা দেখি যে আওয়ামী লীগের ভিতরের কিছু এমপি, যারা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে চেয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু জায়গায় অস্বস্তি এবং একধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশি-বিদেশী নানারকম ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড় করিয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনের পর এই বিষয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন রকম আলোচনা হচ্ছে।
আর এই সমস্ত প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগের ভিতরে গুঞ্জন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের ভিতর কি আবার নতুন করে মোশতাকদের আনাগোনা হয়েছে? আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপপ্রচারগুলো হচ্ছে, সেইসব অপপ্রচারগুলোর বেশকিছু তথ্য যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভিতর থেকেই। আওয়ামী লীগের কোন নেতা, মন্ত্রী, এমপি হয়তো এই সমস্ত তথ্যগুলো দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভিতরে যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এই কোন্দলের কারণে এক নেতার তথ্য অন্যজন গণমাধ্যম এবং বিএনপি-জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এরকম বেশকিছু খবর পাওয়া গেছে। দলের এমপি, প্রভাবশালী নেতারা প্রকাশ্যে সরকারের গুণগান গাইলেও গোপনে সরকারের নানা সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করেছেন। আর এই সমালোচনা লুফে নিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের এজেন্টরা এবং এটিকে নিয়েই তারা পরবর্তীতে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। আর একারণেই মনে করা হচ্ছে যে, এখন আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু বিভীষণদেরকে থামানোই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগে আবার নতুন কোন মোশতাকের জন্ম হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেই উঠেছে। আর এই নতুন মোশতাকদের আনাগোনা বন্ধ না করতে পারলে সামনে আবার আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেক আওয়ামী লীগের নেতাই।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন