নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১০ মার্চ, ২০২১
দল এবং সরকার নিয়ে কঠোর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের গতি আনতে এবং কাজের গতি বাড়াতে যেমন সরকারের ভেতরে তিনি কঠোর সর্তকবার্তা দিচ্ছেন, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের ভেতর নানা বিশৃঙ্খলা বন্ধেও শেখ হাসিনা কঠোর হচ্ছেন। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর পর শেখ হাসিনার কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত দৃশ্যমান হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যে সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান দৃশ্যমান হতে পারে, সেগুলো হলো:
১. সরকারের কাজের গতি বৃদ্ধি: গত এক বছরে করোনার কারণে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে অন্তত দুটি একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান দেখা যাবে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে যাদের কারণে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন হচ্ছে, প্রকল্পের কাজে শৈথিল্য হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান: দুর্নীতি দমন কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়েছেন। একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর আলাদা সুনাম রয়েছে। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী তাকে বেছে নিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন এই নিয়োগের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণ হয়েছে।
৩. সরকারের ভেতর অপশক্তিদের চিহ্নিত করা: টানা ১২ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। সরকারের ভেতরে বিএনপি-জামাতপন্থীদের তৎপরতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এরকম বেশ কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছেন। এদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
৪. দলের শুদ্ধি অভিযান: নতুন করে আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের কারণে শুদ্ধি অভিযান কার্যক্রম কিছুটা থমকে গেছে। তবে খুব শীঘ্রই আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
৫. বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিল, অবশেষে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন