নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০২ এএম, ০৭ এপ্রিল, ২০২১
আগাগোড়াই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামের তেমন জনপ্রিয়তা ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং কিছু ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠির সমর্থনের কারণে একটা অবস্থান ছিলো দলটির। যদিও শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী তকমা ছিলো দলটির। কিন্তু সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে অবস্থান কমতে থাকে দলটির। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যখন একে একে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হচ্ছিলো তখন অনেকে বলেছিলেন যে জামায়াতের টাকা এবং বিদেশি সমর্থনের কারণে শেখ হাসিনার সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করতে পারবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো বাধাই রায় কার্যকর করা আটকাতে পারেনি। আর তখন থেকেই ভাটা পড়তে থাকে জামায়াতের রাজনীতি।
এরপর থেকে শুরু হয় সহিংসতা, জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি। আর এতে সামনে আসে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। তারা প্রকাশ্যে গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে আতঙ্কের রাজনীতি শুরু করে। যদিও সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বেশি দিন তারা মাঠে থাকতে পারেনি। তারপর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারা বিএনপির কাঁধে ভর করে নেপথ্যে থেকে নির্বাচন ও সহিংসতায় অংশ নেয়। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ধর্মভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম। দেশব্যাপী তাণ্ডব চালানোর কারণে ধর্মভিত্তিক আরেক দল জামায়াতে ইসলাম বিলিন হয়ে যাচ্ছে। কোনো আলোচনায় জামায়াতের নাম আসছে না। যদিও এই অবস্থানের কারণে জামায়াতের অনেক নেতারা তাদের শীর্ষ নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন।
জামায়াতের একজন নেতা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা যদি করতেই হয় তাহলে সরাসরি রাস্তায় নেমে করা উচিৎ ছিলো কিন্তু তা না করে হেফাজতের নেপথ্যে থেকে ইন্ধন দিয়ে যখন কর্মসূচি সফলতার দিকে তখন সব ক্রেডিট চলে গেলো হেফাজতের। আর মানুষের মধ্যে জামায়াতের যে ধর্মীয় রাজনৈতিক অবস্থান ছিলো সেটি এখন হেফাজতে ইসলামের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে হেফাজতের পেছনে গিয়ে আমাদের অবস্থান সংকটে পড়েছে।
একাধিক সূত্র বলছে, জামায়াত হেফাজতকে পেছন থেকে ইন্ধন দিয়েছিলো মূলত একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ফায়দা নেয়ার জন্য। কিন্তু সরকার যে ঠাণ্ডা মাথায় ডিল করবে সেটি ভাবেনি জামায়াত। তারা ভেবেছিলো নরেন্দ্র মোদির বিরোধীতা করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সরকার হয়তো কঠোর অবস্থানে যাবে এবং সেই সুযোগে পরিস্থিতি উস্কে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে। কিন্তু সরকার যে এতোটা দক্ষতার সঙ্গে ঠান্ডা মেজাজে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা ভাবেনি জামায়াত নেতারা। আর এটি তাদের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। আর এই নেপথ্যের রাজনীতি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতের জন্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলাম বিএনপির কাাঁধে ভর করে রাজনীতির মাঠ ধরে রাখার যে কৌশল নিয়েছিলো সেই অবস্থান হয়তো তাদের জন্য সুবিধাজনক ছিলো কারণ বিএনপি ধর্মভিত্তিক দল না। কিন্তু এবার তারা হেফাজতের নেপথ্যে থেকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছে তা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। বিশেষ করে হেফাজতও তাদের মতো ধর্মকে সামনে রাখে ফলে এবার যে ক্ষতি হলো তাতে করে ঘুড়ে দাঁড়ানোটা জামায়াতের জন্য অনেক কঠিন হবে। এমনও হতে পারে জামায়াতের যে সামান্য সাংগঠনিক শক্তি আছে তাও বিভাজন হতে পারে হেফাজত ইস্যুতে। তবে সামনের দিনগুলোতে জামায়াত কিভাবে তাদের অবস্থান ধরে রেখে রাজনীতি করবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে এখন দলটি খুবই সংকটপূর্ণ সময় পার করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন