নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ০৭ এপ্রিল, ২০২১
সরকার এখনও হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেননি। কিন্তু তার পরেও হেফাজত যেন লন্ডভন্ড, বিপর্যস্ত এবং বিভক্ত। হেফাজতের নেতারাই এখন আত্মসমালোচনায় মত্ত হয়েছেন। একে অন্যকে সমালোনা করছেন, নিজেদের ভুলগুলোর ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলছেন। বাইরে হেফাজতকে যতোই হুংকার দিতে দেখা যাক না কেন ভেতরে ভেতরে হেফাজতের ভেতরেই চলছে তীব্র টানাপোড়েন। হেফাজতের নেতারা মনে করছেন জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের আমীর হওয়ার পর অন্তত ৫টি ভুল করেছেন যে ভুলের কারণে হেফাজত এখন একটা সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ সহসা সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করছেন।
হেফাজতের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের দায়িত্ব নেয়ার পর একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সরকারের কোনো আক্রমণের আগেই হেফাজত বিপর্যস্ত হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন তারা। হেফাজতের ভুলগুলোর ব্যাপারে হেফাজতের মধ্যেই নেতারা বিভিন্ন রকম মতামত দিচ্ছেন। তারা হেফাজতের পঁচটি ভুলকে চিহ্নিত করেছেন।
১. রাজনৈতিক চরিত্র দেয়া: হেফাজতের নেতারা মনে করছেন হেফাজত ছিলো কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আল্লামা শফী এই সংগঠনটির একটি অরাজনৈতিক চরিত্র রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটিকে যখন রাজনৈতিক অবয়ব দেয়া হচ্ছে তখন হেফাজত বিতর্কিত হচ্ছে এবং হেফাজতকে রাজনীতিকরনের মাসুল দিতে হচ্ছে এখন।
২. সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করা: হেফাজতের সিংহভাগ নেতাই মনে করেন যে সরকার একটা বড় শক্তি সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করে কখনও জয়ী হওয়া যায় না। আর এ কারণেই জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকারের সাথে বাহাস করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ফলে একমাত্র হেফাজতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৩. ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকার কাণ্ড: হেফাজতের বড় ভুল ছিলো নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করা। হেফাজতের বৈঠকে আলোচনা হয়েছিলো তারা শুধু নামমাত্র প্রতিবাদ করবেন এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে তা রীতিমতো তাণ্ডব। এটি দেশের সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি আর এ জন্য হেফাজতকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে মনে করছেন হেফাজতের নেতারা।
৪. মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূরত্ব: জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিশেষ করে ২০১৩ এর পর থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হেফাজতের নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়। তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একরকম ক্রিতদাসের মতো ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যখন কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি হয়েছে তখন শিক্ষার্থীদের উচ্চাকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। তারা নিজেদের ক্যারিয়ার ভাবনা তৈরি করেছেন আর এর ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত ও নতুন চিন্তা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত সামাজিক মাধ্যমের যুগে শিক্ষার্থীরা ভালো মন্দ সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করতে পারছেন, তাদেরকে আগের মতো যা বলা যাবে সেটিই মেনে নেবেন সেই পরিস্থিতি নাই। যার ফলে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দ্রুত হেফাজতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছেন। যদিও নতুন নেতৃত্বের উচিৎ ছিলো দায়িত্ব গ্রহণ করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আস্থা ও বিশ্বাসের মধ্যে নেয়া কিন্তু সেটি নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
৫. অতিরিক্ত লোভ: হেফাজতের অধিকাংশ নেতাই মনে করেন যে তারা একের পর এক সরকারের কাছে দাবি করেছেন আবার ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাঁদাবাজি করেছেন, সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। যখন হেফাজতের ১৭ জন কর্মী মারা গেছেন বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে সেই সময় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের প্রমোদবিহার হেফাজতের কর্মী এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের স্তম্ভিত করেছে। আর এখান থেকে হেফাজতের লোভের বিষয়টি বেড়িয়ে এসেছে। এই লোভ হেফাজতের সর্বনাশ করছে বলে হেফাজতের নেতারা এখন প্রকাশ্যে বলছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।