নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৮ এপ্রিল, ২০২১
সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে সরকার। হেফাজত সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে। শুধু সরকারকে নয়, হেফাজত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজত যে তাণ্ডব করেছে তা নজিরবিহীন এবং চিন্তার অতীত। একে একাত্তরের বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। হেফাজতের এই সহিংসতা তাণ্ডব নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই কথা বলছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে হেফাজত সম্পর্কে একটি নীতিনির্ধারণী বক্তব্য রেখেছেন। এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই কথা বলছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং বাহাউদ্দিন নাছিম কঠোর ভাষায় হেফাজতের সমালোচনা করছেন। কিন্তু লক্ষণীয় যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হলো প্রেসিডিয়াম। সেই প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশ সদস্যই হেফাজতের ব্যাপারে মৌনব্রত অবলম্বন করছেন। তাদের কোন বক্তৃতা-বিবৃতি বা কথাবার্তা চোখে পড়ছে না। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই এখন নানারকম গুঞ্জন এবং কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম সংসদে হেফাজতকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সমালোচনা করেছেন এবং হেফাজতের বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু শেখ সেলিম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে সৈয়দা সজেদা চৌধুরী অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কিন্তু অন্যান্য প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে এখনো হেফাজতের ব্যাপারে জোরালো কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। মন্তব্য পাওয়া যায়নি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খানকেও আমরা এ নিয়ে কথাবার্তা বলতে দেখিনি। ২৬-২৭ মার্চের আগে হেফাজত প্রথম তাণ্ডব চালায় সিলেটের শাল্লায়। সিলেটের আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। তিনি এখন পর্যন্ত হেফাজতকে নিয়ে কোনো কথা বলেনি। প্রেসিডিয়ামের আরেক সদস্য আব্দুল মান্নান খানকেও আমরা নীরব দেখছি। নীরব দেখছি অন্যান্যদেরকে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম হল সবচেয়ে নীতিনির্ধারণী সংস্থা। একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য একজন জাতীয় নেতা এবং তার মর্যাদা, গুরুত্ব অনেক বেশি। এই প্রেসিডিয়াম সদস্যরা কেন হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন কিন্তু এখন পর্যন্ত হেফাজতকে নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণীয় কথাবার্তা দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলছেন যে, দেশে এখন করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। করোনার ভয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করা হয়েছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা কোনো কর্মসূচিতে নাই। সাধারণত এ ধরনের বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া হয় কোনরকম কর্মসূচির মধ্যে থাকলে। কর্মসূচি ছাড়া এ ধরনের বক্তব্য বিবৃতি দেওয়াটা শোভন নয় বলেও কেউ কেউ বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগে যারা হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের পক্ষে তারা মনে করছেন যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন ওয়েবনারে বা জুম মিটিং এর মাধ্যমে, এমনকি টকশোতে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কথা বলা উচিত। কারণ তারাই দলের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং নীতিনির্ধারক নেতা বটে। তাদের যদি স্পষ্টভাবে কথাবার্তা বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন তাহলে কর্মীরা উৎসাহিত হয় এবং তারা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। সেই কারণেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের নীরবতা নিয়ে দলের ভেতর প্রশ্ন উঠেছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।