নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৩ এএম, ১২ এপ্রিল, ২০২১
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত। অন্যদিকে গতকাল দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই খবর যেন তৃণমূলের কর্মীদের জন্য টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দলের তৃণমূলের অধিকাংশ কর্মীরা খালেদা জিয়ার প্রতি বেশি আস্থাশীল-আনুগত্য। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তারেক জিয়া লন্ডনে থেকে দলের পুরো দায়িত্ব নেবেন আর এই বিষয়টি তৃণমূলের একটি বড় অংশের নেতাকর্মীরা মানতে পারছেন না।
অনেকে মনে করেন বিএনপির আজকের এই অবস্থার জন্য তারেক রহমান অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে তারেক রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দলের আজ এই বেহাল দশা বলে তণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। এখন যদি তারেক জিয়া দলের পুরো নেতৃত্বে আসেন তাহলে দলের মধ্যে যারা আদর্শিক নেতাকর্মী তাদের একটি বড় অংশ দলীয় কর্মকাণ্ডে নিক্রিয় হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব এমনিতেই দলের অনেক সিনিয়র নেতা মানতে চান না। তারপর যদি বাইরে থেকে অনলাইনে দলের নেতৃত্ব দেন তাহলের দলের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে। অন্যদিকে আগে থেকেই তারেক রহমান একটি অংশকে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন ফলে তারেক রহমানের পুরো নেতৃত্বে দল চললে সেই অংশটির কারণে অনেক সিনিয়র নেতা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে একটি বড় ধরনের ঝড় ওঠার সম্ভবনা রয়েছে। আর এই ঝড়ে হয়তো অনেক সিনিয়র নেতাই বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেবেন। কারণ এসব সিনিয়র নেতারা এমনিতেই বয়সের ভারে নূজ। তারপর এখন দলীয় কোন্দল সামলে নিজেদেরকে মেলে ধরার মত শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা তাদের নেই। ফলে তারা রাজনীতি থেকে নিক্রিয় হওয়ার দিকেই ঝুঁকবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে বিএনপির সাংগঠনিক বেহাল দশা। অন্যদিকে দলে একঝাঁক শীর্ষ নেতা করোনায় আক্রান্ত এবং কিছু সিনিয়র নেতা বয়সের কারণে করোনাকালে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে দলের চেয়াপার্সনের করোনায় আক্রান্তের খবর বিএনপির জন্য খুবই হতাশার। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসের সমস্যা রয়েছে। ফলে তিনি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর এই অবস্থায় তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে বিএনপির তৃণমূল এবং সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্ব যার হাতে যাবে তিনি দেশের বাইরে এবং দলের একটি অংশের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে সামনের দিনগুলো বিএনপির রজানীতির জন্য খুবই কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এখন দেখার বিষয় বিএনপি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলা দিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ায়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন