নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২১
হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার অভিযান চলছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় দেড় ডজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ের ৫ শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে হেফাজত দাবি করেছে। এর মধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন হচ্ছে যে হেফাজতের একটি অংশের সঙ্গে সরকার হয়তো গোপনে আতাত করছে এবং সেই অংশটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বর্তমান মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীর নাম আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়াও আহমেদ শফীর পুত্র আনাস মাদানীর নামও এসেছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে সরকার কোনো হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে, কোনো হেফাজতকেই লালন-পালন করবে না এবং কোনো হেফাজতের সঙ্গেই নতুন করে সম্পর্ক করবে না। ২০১৩ সাল থেকে গত আট বছরে সরকারের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে যে হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক দূরত্ব সেই দূরত্ব কখনও একাকার হওয়ার নয়। হেফাজত না রেখে বরং একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম নীতির মধ্যে কওমি মাদ্রাসাকে আনাই সরকারের মূল লক্ষ্য।
সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দুই হেফাজতই বিপজ্জনক। যখনই একটি হেফাজতকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দেবে তখন এরা সংগঠিত হবে এবং সংগঠিত হয়ে আওয়ামী লীগের ওপরেই ছড়ি ঘোড়ানোর চেষ্টা করবে, আওয়ামী লীগকেই চাপে ফেলার চেষ্টা করবে। ওই নেতা বলেন যে গত আট বছরে হেফাজত আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বা সরকারের কাছ থেকে কম পায়নি। বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার পরেও তারা যে আচরণ করেছে তা দুর্ভাগ্যজন এবং দুঃখ্যজনক।
আওয়ামী লীগের অন্য একজন নেতা বলেছেন, হেফাজতের সাম্প্রতিক তৎপরতায় কয়েকটি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে তা হলো ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী কখনও আওয়ামী লীগের বন্ধু হতে পারে না। আওয়ামী লীগ যদি তাদেরকে বন্ধু ভাবে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য ভুল। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে এসব ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দমন করতে হবে। এসব ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের যদি দমন করা যায় তাহলে তারা তেমন কোনো প্রতিরোধ করতে পারবে না।
ওই নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় অনেকে বলেছিলো যে যুদ্ধারাধীদের বিচার হলে দেশে তাণ্ডব হবে এবং তদের খুঁটি অনেক শক্ত ও শেকড় অনেক গভীরে। তাদের বিশাল ক্যাডার বাহিনী রয়েছে তাদের বিচার করলে আওয়ামী লীগ সরকার প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়বে কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেলো ভিন্ন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর জামায়াত টু শব্দ করতে পারেনি। এখন যখন হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি হবে না এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিলো সেই সময় অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলো যে হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো হেফাজত পাল্টা আঘাত হানবে এবং মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি। হয়তো নতুন করে তাণ্ডব সৃষ্টি করবে যেমন তাণ্ডব তারা ২৬ ও ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ এর মে তে করেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতারের পরে তেমন কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি সংগঠনটি। তবে হেফাজত বলছে যে দুটি কারণে তারা প্রতিবাদ করতে পারছে না। প্রথমত রমজানের কারণে কওমি মাদ্রাসাগুলো এখন বন্ধ এবং দ্বিতীয়ত এখন সারাদেশে লকডাউন থাকায় তারা চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি প্রতিবাদ করতে চাইতো তাহলে লকডাউন বা কওমি মাদ্রাসা বন্ধ থাকা কোনো বিষয় না। মূল বিষয় হলো তাদের মধ্যেই নানারকম সমস্যা ও কোন্দল-বিভক্তি রয়েছে। এই কোন্দল-বিভক্তি দিয়ে আরেকটি হেফাজত তৈরি করা হবে এমন গুঞ্জনে আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্কারভাবে জানানো হয়েছে যে হেফাজতকে ‘হেফাজত‘ নয় বরং যারা দুর্বিত্ত ও দুষ্কৃতিকারী কোনো হেফাজতকেই দানব হয়ে উঠতে দেয়া হবে না। হেফাজতের মতো এরকম কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই সরকার এখন মনে করছে না। সরকার এখন কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম নীতির মধ্যে আনাটাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য বলে সরকারি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।