নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ৩০ এপ্রিল, ২০২১
দেশের রাজনৈতিক কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যেই তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত রেখেছে। অন্যান্য রমজানে যেমন ইফতার রাজনীতি থাকে সেই রাজনীতিও এখন নেই। রাজনীতির এই লকডাউনের সময়ও আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্থিরতা টানাপোড়েন কমেনি বরং নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি কোন্দল এবং অস্বস্তি ক্রমশ বেড়েছে। লকডাউনের সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে নানা মেরুকরণ। বিশেষ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়ুল কাদেরকে নিয়ে একজন মাঠপর্যায়ের নেতা, হোক না সে সাধারণ সম্পাদকের ভাই, যে ভাষায় কথা বলছেন তা আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর। এছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বড় অংশ দিবানিদ্রার মতো ঘুমিয়ে আছেন। কোনো বিষয়ে তাদের কোনো কথাবর্তা নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের ইস্যুতে দেখা গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, প্রশাসনিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে মোকাবেলা করেছে। কিন্তু দলের যে ভূমিকা পালন করা উচিত ছিলো সেই ভূমিকা রাজনৈতিক দলগুলো পালন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আর এ কারণেই সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। এজন্য আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বড় অংশ তৃণমূল প্রায় সবাই চলতি ডিসেম্বরেই কাউন্সিল করার পক্ষে। তারা মনে করছেন যে, কাউন্সিল অধিবেশনের নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং সংগঠনকে গোছাতে হবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়েছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সেই কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দল এবং সরকারকে আলাদা করার কৌশল হিসেবে যারা মন্ত্রীসভায় ছিলেন তাদের অধিকাংশকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ দেন। শুধুমাত্র ভাগ্যবান কয়েকজন যেমন ড. আব্দুর রাজ্জাক, ওবয়াদুল কাদের, ডা. দীপু মনি, ড. হাসান মাহমুদ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সরকারে জায়গা পান। অন্যদিকে এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরীর মতো ছাত্রলীগ থেকে আসা নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীত্ব থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাননি। এজন্য তাদের শুন্যস্থান পূরণ করতে যারা এসেছেন তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে মোটেও মনোযোগী নন এমন কথা উঠেছে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে। বিশেষ করে যাদেরকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই কোনো কার্যক্রমে থাকেন না।
আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা বলছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাড়া আর কোনো প্রেসিডিয়াম সদস্যকেই রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুবুল আলম হানিফ, ড. হাসান মাহমুদ এবং বাহাউদ্দিন নাসিমকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। ডা. দীপু মনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে খুব বেশি তৎপর দেখা যায় না। তবে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সংকটজনক জায়গা তৈরি হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম নিয়ে। প্রেসিডিয়াম হিসেবে যারা আছেন তাদের মধ্যে একজন দু’জন ছাড়া কেউই কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলছে না। এমনকি সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নহিদ, আব্দুল মান্নান খানসহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতেই থাকছেন না।
এমনিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলের সঙ্গে যে যোগাযোগ এবং তৃণমূলের সমস্যা সমাধানের যে উদ্যোগ সেখানেও ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে নানমুখী আলোচনা চলছে কেউ কেউ বলছেন তিনি দল পরিচালনায় দ্বিতীয় মেয়াদে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না বরং নিজেই নানারকম বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এসব কিছুর মধ্যেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের কথা উঠেছে। করোনার প্রকোপ চলে গেলেই আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলের উদ্যোগ দৃশ্যমান হতে পারে। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনার প্রকোপ কখন শেষ হয় তার ওপর।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন