নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ০৫ মে, ২০২১
বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ হয়ে সিসিইউতে আছেন। তার শারীরিক অবস্থার সম্বন্ধে এক ধরনের অস্পষ্টতা এবং লুকোচুরি খেলা চলছে। কোনো চিকিৎসকই সঠিকভাবে বলছেন না তার প্রকৃত অবস্থা কি। তবে এভারকেয়ার হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়া এখনও অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। তবে সিসিইউতে যাওয়ার পরে তারা অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি। এটি ভালো লক্ষণ। বেগম খালেদা জিয়ার এই শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপি`র পক্ষ থেকে কেউ কেউ মনে করছেন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের মধ্যেও এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের অনেকেই মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই হওয়া উচিত। এখন তাকে বিদেশে নেওয়ার ঝুঁকি নেয়াটি ঠিক হবে না।
গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে দেশেই চিকিৎসা দেয়া উচিত। এখন বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দেওয়াটা হবে বোকামি। শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা করতে যাবেন কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আওয়ামী লীগের অন্তত দুইজন নেতা কথা বলেছেন এবং তাদের দুজনেরই কথা অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং রুচিশীল। এদের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনাকে জয় করে বেগম খালেদা জিয়ার ফিরে আসুক। আর আওয়ামী লীগ আরেক নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠুন এটা আমরা চাই এবং আমরা তার আরোগ্য কামনা করি। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া তার ইচ্ছায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে সরকারের করনীয় এখন পর্যন্ত কিছু নেই। তিনি এটাও জানান যে, সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে কোনো আবেদন আসেনি।
তবে বেগম খালেদা জিয়া প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কি ভাবছেন সেটি নিয়ে জনমনে নানা রকম উৎসাহ এবং কৌতুহল রয়েছে। শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া দুইজনই নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনে বিজয়ের পেছনে দুই নেত্রীর অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মনে করা হয়। এরশাদের পতনের পর বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন এবং শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা হন। আশির দশক থেকে ২০১৪ এর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দুই নেত্রী ছিলো একটি বহুল উচ্চারিত রাজনীতির নাম। একজন আরেকজনের চরম প্রতিপক্ষ ছিলো এবং একজন আরেকজনের সমালোচনায় মুখর থাকতেন।
কিন্তু তারপরও তাদের এই দুই নারী নেতৃত্বের হাত ধরেই বাংলাদেশ গণতন্ত্র এনেছে এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রেখেছেন। যদিও বিএনপি`র জন্ম ক্যান্টনমেন্টের সামরিক বেষ্ঠনীতে এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি, লুটপাট, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ নানারকম অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। রাজনীতিকে কলুষিত করার যে দায় সে দায় বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অনেকখানি পৌঁছায়। তারপর দুই নেত্রী যখন ২০০৭ এ কারাবরণ করেছিলেন সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার জন্য যে সহানুভূতি দেখেছিলেন, তার জন্য খাবার পাঠিয়েছিলেন, সেই প্রেক্ষাপট থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল, খালেদার অসুস্থতায় প্রধানমন্ত্রী কি ভাবছেন। তবে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন