নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ০৬ মে, ২০২১
বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার যে আবেদনটি করেছেন তা এখন আইনমন্ত্রী কাছে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সারাদিন আইন মন্ত্রণালয় এই আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের উপর আইনমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আইনমন্ত্রী বিকেলে জানিয়েছেন যে, আজ সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে যে, আইনমন্ত্রী আইন মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। তারপর এ সম্পর্কে তার চূড়ান্ত মতামত দেবেন।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পক্ষে তার ভাই যে আবেদনটি করেছেন সে আবেদনটিতে সুনির্দিষ্ট কোন দেশের নাম উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র বিদেশ যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে একরকম ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আসলে কতটুকু অসুস্থ এবং চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে কি মতামত দিচ্ছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কারো কাছেই নেই। বিএনপি নেতৃবৃন্দ গতকাল পর্যন্ত বলছিলেন যে তার অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু শামীম ইস্কান্দারের আবেদনের পরেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিএনপি নেতারা বলতে থাকেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর। তাকে এখনই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার রীতি পুরাতন। অনেক রাজনীতিবিদই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। এমনকি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কদিন আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করে আসলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কি সত্যি সত্যি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন নাকি তার চিকিৎসার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হচ্ছে এ নিয়ে এক ধরনের সন্দেহ এবং গুঞ্জন রয়েছে।
প্রথম কথা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেছে, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে একজন রোগী ১০ ঘণ্টা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যাবেন এটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। তাছাড়া বাংলাদেশের যারা গুরুতর অসুস্থ হয় তাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ভারত বা সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা অনুযায়ী জামিনপ্রাপ্ত এবং তার জামিনকে শর্তহীন করার জন্য তার আবেদনও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে যে তিনি কোন দেশে যেতে চান এবং কতদিনের জন্য তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে যে, আবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে দেশের নাম উল্লেখ ছাড়াও তার চিকিৎসা সারতে কতদিন লাগবে সেটিও উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিলো। তবে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা বলছেন একজন রোগীর চিকিৎসা কতদিন লাগবে এটা আগাম করে বলা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রেও সমাধান আছে। যদি তিনি তিন মাসের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চান, সেটি যদি আরও সময় লাগে সময় বর্ধিত করা আবেদন করা হবে এবং সেই সময় চিকিৎসকের প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের সুপারিশ বিবেচনা করে তার বিদেশে থাকার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
কিন্তু অস্পষ্ট একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে যখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে তখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানারকম জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। গত কিছুদিন ধরেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার পায়তারা করছিল বিএনপি। বিশেষ করে তৃতীয় মেয়াদে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। সেই জাবিনের আবেদনটিতে তার বিদেশ যাওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ে সেই আবেদনটি গ্রহণ না করে পূর্বের ধারায় অর্থাৎ দুইটি শর্তে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। শর্ত দুইটি ছিলো তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা করবেন এবং দেশের ভেতর থেকে চিকিৎসা করবেন।
নির্বাহী আদেশবলে এই শর্তগুলো স্থগিত করাই যেতে পারে কিন্তু সেখানে আবেদনকারীকে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। আর এই সুনির্দিষ্টকরণ না থাকার কারণে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন যে, বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে একটি ভিন্ন রকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মদদ দেওয়া, উস্কানি দেওয়া এমনকি প্রবাসী সরকার গঠন করার কথাও বাজারে চাউর আছে। আর এই সবকিছুর প্রেক্ষিতেই সংশ্লিষ্ট সকলের মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়াটা যেন শুধুমাত্র মানবিক এবং চিকিৎসার জন্যই হয়, কোন রাজনৈতিক কারণে যেন তাকে বিদেশ না যাওয়া হয়। অসুস্থতাকে যেন একটি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো না হয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।