নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ১২ জুন, ২০২১
রাজনৈতিক ইস্যু নেই, আন্দোলন করার শক্তিও দলটির নেই। একরকম নিস্তব্ধ নিথর হয়ে আছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। কিন্তু এর মধ্যেও দলটির ভেতরে ভেতরে উত্তাপ ছড়ানো হচ্ছে এবং এই উত্তাপের মূল কারণ কমিটি বাণিজ্য। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এবং এমনকি ঢাকা মহানগরীতে কমিটির জন্য অবাধে টাকা লেনদেন হচ্ছে। আর এই সমস্ত টাকা লেনদেন করা হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নামে। কেউ কেউ দাবি করেছেন তারা সরাসরি তারেক জিয়াকে টাকা দিয়েছেন, টাকা দিয়েও তারা কমিটিতে থাকতে পারেননি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা মহানগরী কমিটি নিয়ে। ঢাকা মহানগরী কমিটির পুনর্বিন্যাস করা হবে এমন কথাবার্তা বলা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি। ঢাকা মহানগরের কমিটির ক্ষেত্রে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে যারা টাকা পয়সা দিতে পারছেন তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই সমস্ত বাণিজ্য করছেন সরাসরি তারেক জিয়া।
বিএনপির একজন নেতা যিনি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন এবার ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি। তিনি অভিযোগ করেছেন যে সরাসরি তারেক জিয়া এই কমিটি বাণিজ্য করছেন এবং তিনি ঢাকা মহানগরীর বড় পদের জন্য এক কোটি টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করছেন। লন্ডনে টাকা পৌঁছানোর পরই তাকে কমিটিতে রাখা হবে কি হবে না সেটি বলে দেয়া হচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরীতে এই কমিটি বাণিজ্যের বিষয়টা এখন এত প্রকাশ্য হয়ে গেছে যে বিএনপি`র লোকজন ধার দেনা করে টাকা যোগাড় করতে চাইছেন কমিটিতে থাকার জন্য। শুধু ঢাকা মহানগরীর কমিটি নয় বরং সারাদেশে এমনকি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এবং এই অভিযোগগুলো উঠছে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে। শুধু তারেক জিয়া একা নয়, বিএনপির আরো কয়েকজন নেতাও কমিটি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। তবে তারা বলছেন যে, তারেক জিয়ার পক্ষ থেকে তারা টাকা তুলছেন। বিএনপির যে সমস্ত নেতা কমিটির জন্য বিভিন্ন নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে বিএনপির মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরা দল চালানোর কথা বলে বা বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন।
বিএনপির একজন তৃণমূলের নেতা বলেছেন যে, গত ১৪ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। দলের নেতাকর্মীদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। ব্যবসা-বাণিজ্য তারা করতে পারছেন না কিন্তু এই মুহূর্তে কমিটিতে থাকার জন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে এবং টাকা পেলেই কমিটিতে রাখা হবে, টাকা না পেলে কমিটিতে রাখা হবে না এরকম কথাবার্তা বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরীর কমিটি করার জন্য অন্তত ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি`র একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আর এইসবের প্রেক্ষিতেই এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে যে তারেক জিয়া এখন নির্বাচন বাদ দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকেই চাঁদা তোলা শুরু করেছেন। চাঁদা নিয়েও যদি কমিটিতে রাখা হতো তাহলে হয়তো এতো কথা হতো না। একই পদের বিপরীতে তিন-চারজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের একজনকে কমিটিতে রাখা হচ্ছে বাকিরাও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। আর এর ফলে বিএনপিতে এখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তীব্রভাবে এবং দলের নেতাকর্মীরা তারেক জিয়ার এরকম অর্থলিপ্সায় হতবাক হয়ে যাচ্ছেন। এরফলে বিএনপির মধ্যে খুব শীঘ্রই গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন