নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০২১
টানা ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ ভালো নেই। বরং নানা রকম সংকট এবং সমস্যা ক্রমশ পুঞ্জিভূত হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে সংকট বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, দ্রুততম কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে সাংগঠনিক পুনর্গঠনই এই সংকট উত্তরণের প্রধান উপায়। তবে করোনা প্রকোপের কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা এখনও জানেনা যে, কাউন্সিল কবে কিভাবে করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সংকট বহুমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১. সরকারের সঙ্গে দূরত্ব: আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে যারা সরকারের গেছেন বা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এক ধরনের দূরত্ব হয়েছে। অধিকাংশ মন্ত্রী হয়েছেন রাজনৈতিক সংশ্রবহীন ব্যক্তি। যারা দলের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন না এবং দলের সঙ্গে তারা খুব একটা সম্পর্ক রাখছেন না। ফলে অনেক বিষয়েই আওয়ামী লীগের নেতারা অন্ধকারে থাকছেন। কিন্তু জনগণের কাছে যখন বিষয়গুলো সমালোচিত হচ্ছে তখন তাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য এটি একটি নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা যার জন্য দায়ী না সেই বিষয়গুলো তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলতে হচ্ছে।
২. এমপিদের বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সংকটের একটি বড় বিষয় হলো যে, এমপিদের বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠন এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় এখন একাধিক আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশেষ করে এমপিরা তাদের পছন্দের লোকজনকে নিয়ে কমিটির করছে। দলে যারা ত্যাগী পরীক্ষিত তাদেরকে বাদ দেয়া হচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়টির ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
৩. দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট: আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ে চেইন অব কমান্ড একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ফ্রিস্টাইলে কথাবার্তা বলছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাসূচক বক্তব্য রাখছেন। দলের ভেতরে কোনো চেইন অব কমান্ড থাকছে না। এটি আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের জন্য উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে যদি দলের সিনিয়র নেতাদেরকে শ্রদ্ধা না করা হয়, দলের উপর থেকে নির্দেশনাগুলো নিচে মানা না হয় তাহলে সংগঠন চালানো অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
৪. বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অক্ষমতা: সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের একটি বড় সংকটে হিসেবে এসেছে যে দলের বিরুদ্ধে, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন যে, যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব কম বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বরং তারা দলের ভেতরে আরও জাঁকিয়ে বসেছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫. মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি: আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো দলের জন্য একটি বড় মাথা ব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না এবং এটি না করার ফলে দলের সংকট আরো বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই স্বীকার করছেন যে, দল ক্ষমতায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর এই দুর্বলতাগুলো এখনো কাটিয়ে উঠতে না পারলে সামনে দু`বছরের মধ্যেই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যেতে হবে এবং সেই সময়ে আওয়ামী লীগ একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।