নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০২১
বিএনপির একটি বড় অংশের নেতারা শুধুমাত্র পদ নিয়ে আছেন কিন্তু কোনো কর্মকাণ্ডে নেই। কালেভদ্রে বিভিন্ন মিটিংয়ে বা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকতা সারতে তারা উপস্থিত হন। কিন্তু অন্যকোনো দলীয় কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদেরকে দেখা যায় না। এদের অন্তত দু`জন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সেই পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত না হওয়ার কারণে তারা এখন বিএনপিতে আছেন বলেই বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেন কিন্তু সংগঠনের কোন কাজে তাদেরকে পাওয়া যায় না। আর এই নিয়ে এখন বিএনপির মধ্যে নানারকম উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে যে, এরকম কর্মহীন নেতৃত্ব রেখে বিএনপিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বিএনপির অপেক্ষাকৃত তরুণ একটি অংশ মনে করছে বিএনপিতে যারা কোন কাজ করছেন না, বিভিন্ন পদ নিয়ে বসে আছেন তাদের বাদ দিয়ে যারা কাজ করতে পারে তাদেরকে নেতৃত্বে আনা উচিত। বিএনপিতে এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। তবে শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
১. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান: জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বিএনপির একসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণেই বিএনপির তরুণ নেতারা তাকে লাঞ্ছিত করেছিল কিন্তু তারপরও তিনি ছিলেন। কিন্তু বিএনপির প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং এই জন্য তিনি পদত্যাগও করেছিলেন। তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলেন যে, জেনারেল (অব.) মাহবুব এখনো বিএনপিতে আছেন। বিএনপিতে থাকলেও তিনি বিএনপি`র কোন কর্মকাণ্ড বা কোনো কর্মসূচিতেও তিনি নাই। বয়সের কারণে এবং বিএনপির রাজনীতির আদর্শিক দিকগুলোর ব্যাপারে তার আপত্তি থাকার কারণেই তিনি বিএনপির সাথে সম্পর্কহীন বলে মনে করা হচ্ছে।
২. ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার: ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার সাবেক স্পিকার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিএনপির প্রবীণ নেতা। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তিনি কর্মহীন। কোনো কর্মকাণ্ডেই তাকে দেখা যায় না। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলোতে তাকে দেখা যায়। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি ঘরবন্দি হয়ে আছেন। বয়সের কারণে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে শরিক হতে পারছেন না। তবে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে।
৩. ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া: ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির সদস্য। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। আর এ কারণেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নেই বললেই চলে।
৪. ড. মইন খান: ড. মইন খান কিছুদিন আগেও বিএনপিতে সরব ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি`র কর্মকাণ্ডে তাকে খুব একটা দেখা যায় না। তার পারিবারিক সূত্র বলছে যে, করোনার কারণে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে তারা দাবি করেন যে ড. মইন খান এখনও বিএনপি`র কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
৫. অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন: অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন বিএনপি`র প্রধান আইনজীবী এবং খালেদা জিয়ার প্রধান কৌঁসুলি তিনি ছিলেন। কিন্তু নানা বাস্তবতায় তিনি এখন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন তার কর্মকাণ্ড আদালতে সীমাবদ্ধ। তবে মাঝে মাঝে তিনি খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
এছাড়াও বিএনপিতে বহু নেতা আছেন যারা বিএনপি`র কেন্দ্রীয় কমিটি, জাতীয় কমিটিতে রয়েছেন কিন্তু কোনো কর্মকাণ্ড করছেন না। কেউ কেউ দাবি করেন যে তারা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। হিসাব করে দেখা গেছে, বিএনপি`র কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধেক সদস্যই এখন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। আর এই গুটিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের কারণেই দলের কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।