নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৭ অক্টোবর, ২০২১
বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের ভেতরে নানা মত দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতারা একই সুরে কথা বলতে পারছেন না। বাইরে আওয়ামী লীগ যে কথা বলছেন ভেতরের একই কথা বলছেন না। বাইরে বিরোধীদলকে আক্রমণ করলেও আওয়ামী লীগের ভেতরে এখন অন্তর্কলহে আত্মসমালোচনার সুর। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের ভেতরে কি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ঘরোয়া আলোচনাগুলো এখন তপ্ত সমালোচনামুখর এবং পরস্পরকে দোষারোপ করার তীব্র প্রবণতা লক্ষণীয়। যে কোন আওয়ামী লীগের আড্ডায় দেখা যায় যে নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন, সাংগঠনিক কাজে সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেকে অসন্তুষ্ট, নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়েও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন উঠছে। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ যে সাংগঠনিকভাবে একই সূত্রে গাঁথা এবং একই সুরে কথা বলে সেটির অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে গত কিছুদিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কথাই ধরা যাক। এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর আওয়ামী লীগ যথারীতি বাইরে থেকে বিএনপির সমালোচনা করেছেন, আক্রমণ করেছে, বিএনপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি জড়িত এমন কথা বলেছে। কিন্তু ভিতরে আওয়ামী লীগের নেতাদের অন্য কথা শোনা যাচ্ছে। তারা বলছেন এই ঘটনায় প্রশাসনের নজিরবিহীন ব্যর্থতা রয়েছে, প্রশাসন কেন কোন কাজ ঠিকমত করতে পারেনি।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির সমালোচনা করছেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে বলছেন যে হাতেগোনা দু-চারজন অনুপ্রবেশকারীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু যখন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একান্তে আলাপ করা যাচ্ছে তখন তারা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন যে তৃণমূল নানারকম প্রলোভন এবং আর্থিক সুবিধায় অনুপ্রবেশকারীদের নাম পাঠাচ্ছেন এবং এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সঠিক মনোনয়ন এর সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্য ভিন্নমত রয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক শক্তি ছিল, সরকারবিরোধী আন্দোলনের যে সাহস এবং প্রত্যয় ছিলো সেটি এখন আর নেই। এখন যদি বিএনপি বড় আন্দোলন করে তাহলে প্রশাসন ছাড়া আওয়ামী লীগ সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকের সন্দেহ রয়েছে। সরকার পরিচালনা নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম সমালোচনা শোনা যায়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ কোন কাজ করছেন না, কিন্তু বাইরে তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন।
এরকম মুখে এক মনে আরেক অবস্থা আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন দৃশ্যমান আর এটি ক্রমশ আওয়ামী লীগকে আরো দুর্বল করে তুলছে বলে অনেকেই মনে করছেন। আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, দলের সাংগঠনিক বিষয়ে দেখভাল করছেন তারা সরকারের কাজে সন্তুষ্ট না। একের পর এক ঘটনা গুলো যেভাবে ঘটেছে সেই ঘটনাগুলো নিয়ে তারা মোটেও খুশি হতে পারছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতারা সব কিছুর দিকে প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকে তাকিয়ে। তারা মনে করছেন যে শেখ হাসিনা যতদিন আছে ততদিন আওয়ামী লীগের কোনো চিন্তা নাই কিন্তু এধরনের ভাবনা আত্মঘাতী বলে অনেকে মনে করছেন। আওয়ামী লীগের ভেতরে যে নানারকম তোলপাড়, নানা মত নানা পদ নানা সমালোচনা এগুলোকে নজরে আনা উচিত বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ সামনে যদি সংগঠনকে একসূত্রে গাঁথা না যায় তাহলে আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নাও হতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।