গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীরের পর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ পদ এবং দল দুটিই হারালেন। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন সেই কঠোর বার্তার ভাষা যারা বোঝেনি, তাদের জন্য এ দুটি ঘটনা দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে, বহু জাহাঙ্গীর এখন আওয়ামী লীগে লুকিয়ে আছে, বহু মুরাদকে পাওয়া যাবে। এরা এই সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিলে তাদেরও মঙ্গল, দলেরও মঙ্গল। তারা যদি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেয় তাহলে এরপর হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো অনেকের বিরুদ্ধেই একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে কোন রকম বিতর্কিত ব্যক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবেন না। জাহাঙ্গীর এবং মুরাদের ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই বার্তাটা তিনি সুস্পষ্টভাবে দিয়েছেন। এখনও যারা জাহাঙ্গীরের মত, মুরাদের মত দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে রয়েছেন এবং বিভিন্ন রকম বিতর্কিত মন্তব্য করছেন তাদেরও সময় ঘনিয়ে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করার এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে তৃণমূলের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিভিন্ন ভুঁইফোড় নেতারা একের পর এক লাগামহীন, দায়িত্বহীন মন্তব্য করছিলেন। তাদের মন্তব্যগুলো হিতে বিপরীত হচ্ছিল এবং আওয়ামী লীগের জন্যও হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত বিব্রতকর। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে লাগাম দ্রুত টেনে ধরার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এই দুটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেখালেন যে, তিনি দেশের জন্য, দলের জন্য এবং আদর্শের জন্য কতটা নির্মোহ হতে পারেন। আর এ কারণেই এই দুটি ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের শিক্ষা বলে অনেকে মনে করছেন।
মুরাদের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা আলোচনা করছেন যে, এরপর কে। আওয়ামী লীগ সভাপতি কিছুদিন আগেই দলের সিনিয়র নেতাদেরকে বলেছিলেন যে, তিনি শুদ্ধি অভিযান করবেন। যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করবে কিংবা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে তাদের কাউকে তিনি ছাড়বেন না। শেখ হাসিনার এই কথাকে যারা স্রেফ কথার কথা মনে করেছিলেন তারা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছিলেন। এখন শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি যেটি বিশ্বাস করেন সেটি করতে এতোটুকু কার্পণ্য বোধ করেন না। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তরুণ সম্ভাবনাময় একজন নেতা হিসেবে তার পরিচিতও ছিল। আর সে কারণেই কেউই চিন্তা করেনি জাহাঙ্গীরকে এভাবে দল এবং মেয়র পদ ছাড়তে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে আদর্শ সবচেয়ে মূল্যবান। নীতি-আদর্শের প্রশ্নে তিনি যে এতটুকো ছাড় দেন না, জাহাঙ্গীরের ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি সেটি প্রমাণ করেছিলেন।
আর ডা. মুরাদ যেভাবে বেপরোয়া এবং লাগামহীন হয়ে পড়েছিলেন তাতে তার লাগাম টেনে ধরবে কে এ নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা কথা উঠেছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে ডা. মুরাদের সমালোচনা করতেও ভয় পেত। কারণ মুরাদ বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গাতো। কিন্তু শেখ হাসিনার এই একটি সিদ্ধান্ত পুরো আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি উৎসাহ-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এখন বিশেষ করে ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতারা মনে করছেন যে, শেখ হাসিনা সব দেখছেন, সব জানেন। যারা সীমালঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো কার্পণ্য করবেন না তিনি। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, বিভিন্ন স্তরে যারা শৃঙ্খলা বিরোধী এবং দলের নীতি আদর্শ পরিপন্থী কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা নেবেন। এখন দেখার অপেক্ষায় যে, জাহাঙ্গীর এবং মুরাদের পর কে এই ধরনের পরিণতি বরণ করেন।