আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাননি! মির্জা ফখরুলের এই না পাওয়ার মর্মবেদনার উৎসমূল সম্পর্কে আমরা উপলব্ধি করতে পারি। দেশবাসী জানে, স্বাধীনতাবিরোধী যে অপশক্তি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে এদেশের মানুষের উপর হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চালিয়েছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তাদের স্বপ্নের পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চক্রান্তে লিপ্ত ছিল সেইপরাজিত অপশক্তি ও তাদের উত্তরাধিকারীদের ষড়যন্ত্রের হিসাব আজ অসার শূন্যতায় পর্যবসিত হয়েছে।
আজ রোববার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারার পরিচালিত করার যে গভীর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল- বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্তরাধিকার এবং একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামের এই হতাশা ও মর্মবেদনাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বিকাশের প্রধান অন্তরায়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক সময়ের মঙ্গা-খরা দুর্যোগ কবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ যখন জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নস্টল রাষ্ট্রে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে তখন বিএনপি নেতারা কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাবেন না। এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি দাপিয়ে বিএনপি নেতারা সিলেট গমন করলেন- এই মহাসড়কের দু'পাশের উপর সবুজ প্রাণ এবং উন্নত জনপদ তাদের চোখে পড়ে না। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শাহটিশইট, সাবমেরিন, এলএনজি টার্মিনাল, চার ও আট লেনের অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে, নিত্য নতুন মহাসড়ক, সেতু, নতুন নতুন রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন, উড়াল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি ও শিক্ষাবৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দারিদ্র বিমোচন, গৃহহীনদের জন্য বিনামূল্যে জমি ও গৃহ প্রদান, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিনামূল্যে করেনা টিকা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টিসহ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শকারী বাংলাদেশের অসংখ্য প্রাপ্তি বিএনপি নেতাদের চোখে পড়ে না।
তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশের অগ্রগতিতে জাতিদ্রোহী-দেশদ্রোহীদের যেমন গাত্রদাহ হয়, ঠিক তেমনি বিএনপি নেতাদেরও সহ্য হয় না। রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যে বিচলিত হয়ে পড়ে বিএনপি- নিজেদের পরাজয় মনে করে। এমনকি সত্যকে স্বীকার করার সাহস পর্যন্ত রাখে না। দেশের চলমান উন্নয়ন ও আগতির স্বীকৃতি দিলে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ গতিশীল হয়। উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে অস্বীকার করার এক ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে শামিল। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিএনপি এতোই অন্ধ যে, কোনো উন্নয়ন ও প্রগতি তাদের চোখে পড়ে না। বিএনপি নামক যে দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপরাজনীতিতে লিপ্ত, যারা ত্রিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, তাদের কাছ থেকে ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাইনি এই ধরনের মন্তব্যই স্বাভাবিক।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উচ্ছ্বাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ এক সময় বৈদেশিক ঋণ ছাড়া কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারত না, সেই বাংলাদেশ দেশরত্ন শেখ হাসিনার দৃঢ় রাষ্ট্রনায়োকোচিত ভূমিকার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপিতে প্রথম স্থান অধিকারের অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব সভায় বাংলাদেশ যখন প্রশংসা ও সমীহ অর্জন করছে তখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতি বিএনপি নেতৃবৃদ্ধ নেতিবাচক মন্তব্য করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা অব্যাহত।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুগপৎভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ "মুজিববর্ষ" মহা-আড়ম্বরে উদযাপন করেছে। এমন একটি মহতি ক্ষণে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে কোনো প্রকার ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি তুলে না ধরে চিরাচরিতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর। আমরা বিএনপিকে এই ষড়যন্ত্র, অপকৌশল ও অপপ্রচারের রাজনীতি পরিত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।