ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি, সাংবাদিক এবং কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির বলেছেন, গতকালকে বাংলা একাডেমিতে আমাদের একটি সম্মেলন হয়েছে। ৬৪টি জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা এসেছেন। সারা দিন ধরে আমাদের সম্মেলন চলেছে।
গতকাল ১৯ জানুয়ারি ছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পরবর্তী কার্যক্রম, নির্মূল কমিটির বিভিন্ন সাম্প্রতিক কার্যক্রম, রাজাকার, আর বদল, আল সামস্-দের পরবর্তী প্রজন্ম, যারা নব্য আওয়ামী লীগ- তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ এবং এখনও দেশে সক্রিয় স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের কর্মকাণ্ড- এসব বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি, সাংবাদিক এবং কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য শাহরিয়ার কবির- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক আল মাসুদ নয়ন।
সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত মাসে আমরা ইউরোপে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছি ব্রাসেলস্-এ। সেখানে ১৫টি দেশের প্রতিনিধি এসেছেন, যাতে ইউরোপের পার্লামেন্টে আমরা মানব বন্ধন করেছি, ইউরোপের প্রেসিডেন্টকে আমরা স্মারকপত্র দিয়েছি, যা ইউরোপের কমিটি অর্গানাইজ করেছে। সেখানে স্মারকপত্রে ৫৫টি দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা স্বাক্ষর করেছেন। এটা ঢাকার অনেক কাগজে এবং টেলিভিশনে খবর রেড়িয়েছে। প্রতি মাসে আমাদের ঢাকাতে বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনি কোথায় দেখলেন যে, নির্মূল কমিটির কোন কার্যক্রম নাই?
সাংবাদিক এবং কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির বলেন, সেখানে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বিভিন্ন দেশের গণহত্যা নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা এসেছিলেন। সেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এসেছে এবং তারা মনে করেন নির্মূল কমিটি একটা বড় টাওয়ারিং জব করছে, সারা পৃথিবীতে এটি একটি উদারণ হতে পারে এবং আমাকে তারা এ বছর ৫টি সম্মেলনে আমন্ত্রণ করেছে। আমাদের অভিজ্ঞতাটা, আমরাই একমাত্র গণহত্যার দাবিতে আন্দোলন করেছি এবং তাদের বিচারও আমরা করতে পেরেছি। আমাদের দাবির কারণেই ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, সরকার তাহলে এমনি এমনি ট্রাইব্যুনাল করতেন না। বিশ্বের সব দেশে যতগুলো গণহত্যার বিচার হয়েছে, সরকার ইচ্ছে করেছে, ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, তার জন্য আন্দোলন করতে হয়নি। বাংলাদেশ একমাত্র ব্যতিক্রম যে, এখানে নাগরিক আন্দোলনের ফলাফল হিসেবে গণহত্যার বিচার হয়েছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, সারাদেশ যখন অন্ধকারে ডুবে গেছে তখন নির্মূল কমিটি আমাদের একামাত্র পথ দেখিয়েছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি না হলে আমরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম না।
রাজাকার, আল বদর, আল সামস্-দের প্রজন্মরা এখনও দেশে সোচ্চার রয়েছে, তারা অনেকে নব্য আওয়ামী লীগ হয়েছে, এ ব্যাপারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পদক্ষেপ কি?- প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কালকে তো এটা আমাদের ঘোষণাতেই বলেছি। ঘোষণাতে বলেছি, আজকে রাজাকার-জামায়াত তারা আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। এটাতো কালকে আমাদের ঘোষণাতেও আলোচনা হয়েছে। আমরা কথা বলছি না, ঠিক তা নয়। আমিতো আওয়ামী লীগ করতে পারি না। এটাতো ঠেকানোর দায়িত্ব আমার না। আমার কাজ হচ্ছে জনসচেতনতা তৈরি করা, আওয়ামী লীগ যাতে এ কাজ না করে। কিন্তু আমিতো ওখানে আটকাতে পারবো না। আওয়ামী লীগে আমার তো কোনো পোস্ট-পজিশন নেই। এটা আমাকে তুলে ধরতে হবে, কোথায় আওয়ামী লীগ কি করছে? আমাদের জেলা-উপজেলাতে যে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন, তারা বলেছেন সম্মেলনে এসব কথা। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামীতে এগুলো সব বেড়ুবে।
তিনি বলেন, কালকে আমাদের সম্মেলনে রামেন্দু মজুমদার থেকে শুরু করে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ছিলেন। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর তো একাত্তর সাংস্কৃতিক স্কোয়াড ছিল এবং সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সে স্কোয়াডের মেম্বার ছিল। শাহরিয়ার কবিরের স্ক্রিপ্ট তখন স্বাধীন বাংলা বেতারেও প্রচার করা হয়েছিল এবং শাহরিয়ার কবির আজকে ‘জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড’র জন্ম দিয়েছে। গত বায়ান্ন বছর ধরে এ কাজগুলো করে যাচ্ছি।
সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, আমাদের সমস্ত জেলা উপজেলার প্রতিনিধিদের বলেছি, কোথায় আওয়ামী লীগের মধ্যে, প্রশাসনের মধ্যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজাকাররা বসে আছে এবং স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড করছে, তাদের তালিকা করুন এবং তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠান। আমরা এগুলো শ্বেতপত্র আকারে পাঠ করব। গত বছর আমরা একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছি। পাঁচ বছরে জঙ্গি, মৌলবাদ- খালিতো জামায়াতে না, সর্বত্র কোথায় কোথায় আছে- তাদেরকে চিহ্নিত করেছি।
তিনি বলেন, আর কি করতে হবে? বরীন্দ্রনাথের মতো বলতে হয়, কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই। এখন কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে, শাহরিয়ার কবির মরে নাই, শাহরিয়ার কবির বেঁচেছিল?